বিশেষ ঘোষণা

বিশেষ ঘোষণাঃ কারিগরি কারণ বশতঃ বেশ কিছু বইয়ের লিঙ্ক কাজ করছে না। সেগুলো ধীরে ধীরে ঠিক করে দেওয়ার কাজ চলছে। কিছু বই অপেক্ষাকৃত ভালো করতে গিয়ে একটু সময় লাগছে। ফেসবুক গ্রুপে প্রত্যেক আপডেট জানিয়ে দেওয়া হবে। মাঝে মাঝে নতুন বই দেবার ও চেষ্ট চলছে ।

বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

বাংলা ভাষার সমস্ত লেখক - এক জায়গায় ক্রমানুসারে

বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
জন্ম - ২৬শে জুন, ১৮৩৮                                                                           মৃত্যু - ৮ই এপ্রিল, ১৯৮৪
নৈহাটি, প.বঙ্গ, ভারত                                                                                      কলকাতা, ভারত


বাংলা সাহিত্যের ভুবনে সর্বপ্রথম ইংরেজি ভাষায় উপন্যাস রচনা করে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় । ইংরেজি ভাষায় রচিত এই উপন্যাসটির নাম "রাজমোহন্স ওয়াইফ" । এই উপন্যাসটি হল বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের রচিত সর্বপ্রথম উপন্যাস এবং উপন্যাসটি 1864 সালে কিশোরীচাঁদ মিত্র সম্পাদিত "ইন্ডিয়ান ফিল্ড" পত্রিকায় ইংরেজি ভাষায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় । বাংলা গদ্যসাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় শাখা অর্থাৎ উপন্যাসকে নিজের লেখনীর দ্বারা সার্থকভাবে রূপায়িত করেছিলেন বলে তাকে বাংলা গদ্যসাহিত্যের "সম্রাট" বলা হয় । বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন কথাসাহিত্যিক, প্রবন্ধকার, সাহিত্য-সমালোচক, পত্রিকা-সম্পাদক এবং বাংলা সাহিত্যে নবজাগরণের অন্যতম পুরোধা ।

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় 1838 সালে জুন মাসের 26 তারিখে বর্তমান ভারতবর্ষের অন্তর্গত পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার নৈহাটি শহরের সন্নিকটে কাঁঠালপাড়া গ্রামে এক ধনাঢ্য পরিবারে ভুমিষ্ঠ হন । এই শ্রদ্ধেয় কথাসাহিত্যিকের পিতার নাম যাদব চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ইনি ছিলেন সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তি ও মেদিনীপুর জেলার ডেপুটি কালেক্টর এবং মাতার নাম দুর্গাসুন্দরী দেবী । যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের আদি নিবাস হুগলি জেলার দেশমুখো গ্রামে অবস্থিত হলেও তার পিতামহ রামহরি চট্টোপাধ্যায় নিজের মাতামহের সম্পত্তি অধিকারসুত্রে লাভ করেন এবং কাঁঠালপাড়ায় আগমন করে বসবাস আরম্ভ করেন । এই বরণীয় কথাসাহিত্যিক ছয় বছর বয়স পর্যন্ত পৈতৃক নিবাস কাঁঠালপাড়াতেই বাস করেন এবং পাঁচ বছর বয়সে কুলপুরোহিত বিশ্বম্ভর ভট্টাচার্যের নিকট থেকে বিদ্যাশিক্ষায় হাতেখড়ি লাভ করেন । বিদ্যাশিক্ষায় হাতেখড়ি লাভ করার পর এই মাননীয় কথাসাহিত্যিক গ্রামেই অবস্থিত রামপ্রাণ সরকার মহাশয়ের পাঠশালায় ভর্তি হন এবং বাল্যকাল থেকে অত্যন্ত মেধাবী হওয়ার কারনে তিনি মাত্র একদিনে বাংলা বর্ণমালা আয়ত্ত করেন । বিদ্যাশিক্ষায় বঙ্কিমচন্দ্রের অসাধারন মেধাশক্তির পরিচয় পাওয়া মাত্রই যাদবচন্দ্র তার বিদ্যাশিক্ষার বিষয়ে খুবই যত্ন নিতে আরম্ভ করলেন । 1844 সালে যাদবচন্দ্র নিজের কর্মস্থল মেদিনীপুরে ছয় বছরের বঙ্কিমচন্দ্রকে নিয়ে এসে সেখানকার কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি করেন । 1849 সালে এই পূজনীয় কথাসাহিত্যিক মেদিনীপুর থেকে নিজের গ্রাম কাঁঠালপাড়ায় ফিরে আসেন এবং কিছুদিন বাড়িতে গৃহশিক্ষক শ্রীরাম ন্যায়বাগীশের নিকটে বাংলা ও সংস্কৃত পাঠ অধ্যয়ন করার পর তিনি হুগলি কলেজে ( বর্তমানে হাজী মহম্মদ মহসীন কলেজ ) জুনিয়র বিভাগে ভর্তি হন । 1853 সালে এই খ্যাতনামা কথাসাহিত্যিক জুনিয়র স্কলারশিপ পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে সিনিয়র বিভাগে ভর্তি হন এবং মাসিক আট টাকা বৃত্তি লাভ করেন । এই প্রতিভাধর কথাসাহিত্যিক 1856 সালে এই কলেজের সিনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় সকল বিষয়ে পারদর্শিতা প্রদর্শন করে দুই বছরের জন্য কুড়ি টাকা বৃত্তি লাভ করতে সমর্থ হন । সেই বছরেই এই সম্মাননীয় কথাসাহিত্যিক হুগলি কলেজ ত্যাগ করে কলকাতা শহরে আসেন এবং আইন বিষয়ে শিক্ষালাভ করার জন্য এই শহরে অবস্থিত প্রেসিডেন্সী কলেজে ভর্তি হন। 1857 সালে জানুয়ারি মাসে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এন্ট্রান্স পরীক্ষা প্রবর্তন করেন এবং সেই বছরেই বঙ্কিমচন্দ্র প্রেসিডেন্সী কলেজের আইন বিভাগ থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিয়ে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন । পরের বছর অর্থাৎ 1858 সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বি. এ. পরীক্ষা প্রবর্তন করলে এই মহান কথাসাহিত্যিক বি. এ. পরীক্ষায় অংশগ্রহন করেন এবং এই পরীক্ষায় তিনি দ্বিতীয় বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করেন । আইনশাস্ত্র অধ্যয়ন সমাপ্ত করার পূর্বে এই স্বনামধন্য কথাসাহিত্যিক যশোহর জেলার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর হিসাবে সরকারী চাকুরিতে যোগদান করেন এবং বারো বছর পরে অর্থাৎ 1869 সালে চাকুরিরত অবস্থায় তিনি আইন পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে প্রথম বিভাগে তৃতীয় স্থান লাভ করেন । 

চাকুরি জীবনে থাকাকালীন এই মেধাবী কথাসাহিত্যিকের সাথে "নীলদর্পণ" নাটকের রচিয়তা দীনবন্ধু মিত্রের পরিচয় ও বন্ধুত্ব হয় এবং প্রবল স্বদেশপ্রেম পরস্পরকে প্রভাবিত করে । এই প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ন্যায়নিষ্ঠ ও আদর্শবাদী ছিলেন বলে ব্রিটিশ শাসকগণ তাকে যথেষ্ট সমীহ করতেন । এই আদর্শবান কথাসাহিত্যিক চাকুরিতে বহাল থাকাকালীন যশোহর, খুলনা, বারুইপুর, আলিপুর, মুর্শিদাবাদ, জাজপুর, বারাসাত, মেদিনীপুর, হুগলি, হাবড়া প্রভৃতি স্থানে গমন করে সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রা সমন্ধে সম্যক জ্ঞান আহরণ করেন এবং এই আহরিত জ্ঞান তাকে সাহিত্য রচনার ক্ষেত্রে প্রভূত সাহায্য করেছিল । দীর্ঘ তেত্রিশ বছর চাকুরি করার পর 1891 সালে সেপ্টেম্বর মাসের 14 তারিখে চাকুরি থেকে অবসর গ্রহন করে এই ন্যায়নিষ্ঠ কথাসাহিত্যিক কলকাতা শহরে অবস্থিত পটলডাঙ্গায় বাড়ি ক্রয় করে সেখানে বসবাস করা আরম্ভ করেন এবং সাহিত্য রচনার পাশাপাশি পাঠ্যপুস্তক রচনাতেও মনোনিবেশ করেন । এই দেশপ্রিয় কথাসাহিত্যিক কর্মজীবনের স্বীকৃতিস্বরূপ ব্রিটিশ সরকারের নিকট থেকে 1891 সালে "রায় বাহাদুর" এবং 1894 সালে "কম্প্যানিয়ন অফ দি মোস্ট এমিনেন্ট অর্ডার অফ দি ইন্ডিয়ান এম্পায়ার" উপাধি লাভ করেন। এই প্রথিতযশা কথাসাহিত্যিক কবিতা রচনার মধ্যে দিয়ে বাংলার সাহিত্য প্রাঙ্গনে প্রবেশ করেন । এই কীর্তিমান কথাসাহিত্যিক ছাত্রজীবন থেকে কবিবর ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত সম্পাদিত সাপ্তাহিক পত্রিকা "সংবাদ প্রভাকর" - এ নিয়মিত কবিতা লিখতেন । 1853 সালে হুগলি কলেজে ছাত্র থাকাকালীন "সংবাদ প্রভাকর" - এ কবিতা প্রতিযোগিতায় এই মহামান্য কথাসাহিত্যিকের রচিত "কামিনীর উক্তি" কবিতাটি পুরস্কৃত হয় । 1856 সালে পুরাকালীন গল্প অবলম্বনে এই আদরণীয় কথাসাহিত্যিকের রচিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ "ললিতা" তথা "মানস" প্রকাশিত হয় । এরপরে বঙ্কিমচন্দ্র উপন্যাস রচনায় মনোনিবেশ করলে বাংলা সাহিত্যে নবযুগের সূচনা হয় । প্রথমে এই কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক ইংরেজি ভাষায় "রাজমোহন্স ওয়াইফ" ও "অ্যাডভেঞ্চারস অফ এ ইয়ং হিন্দু" (1864) দুইটি উপন্যাস এবং পরে বাংলা ভাষায় উপন্যাস রচনা করতে আরম্ভ করলেন । বাংলা ভাষায় রচিত সাহিত্যসম্রাটের উপন্যাসগুলি পাঠকমহলে বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করে । বাংলা ভাষায় এই জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক চৌদ্দটি উপন্যাস , দুইটি পাঠ্যপুস্তক ও কিছু প্রবন্ধ রচনা করেন । 

এই কালজয়ী কথাসাহিত্যিকের রচিত দুইটি পাঠ্যপুস্তক হল - সহজ রচনা শিক্ষা (1891) ও সহজ ইংরেজি শিক্ষা (1891) এবং উপন্যাসগুলি হল - দুর্গেশনন্দিনী (1865), কপালকুণ্ডলা (1866), মৃণালিনী (1869), বিষবৃক্ষ (1873), ইন্দিরা (1873), যুগলাঙ্গুরীয় (1874), চন্দ্রশেখর (1875), রজনী (1877), রাধারাণী (1877), কৃষ্ণকান্তের উইল (1878), রাজসিংহ (1882), আনন্দমঠ (1882), দেবী চৌধুরাণী (1884) ও সীতারাম (1887)। উপন্যাসগুলির মধ্যে একমাত্র "রাধারাণী" উপন্যাসটি 1877 সাল থেকে অণু আকারে "বঙ্গদর্শন" পত্রিকায় প্রকাশিত হয় । গ্রন্থাকারে এই উপন্যাসটি 1886 সালে প্রকাশিত হয় । এই প্রবাদপ্রতিম কথাসাহিত্যিক প্রবন্ধ রচনাতে সিদ্ধহস্ত ছিলেন, তার রচিত উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধগুলি হল - লোকরহস্য (1874), কমলাকান্তের দপ্তর (1875), বিজ্ঞানরহস্য (1875), বিবিধ সমালোচনা (1876), সাম্য (1879), মুচিরাম গুড়ের জীবনচরিত্র (1884), কৃষ্ণচরিত্র (1886), বিবিধ প্রবন্ধ (প্রথম ও দ্বিতীয় খন্ড - 1887 ও 1892), শ্রীমদ্ভগবত গীতা (1902) প্রভৃতি । এই সর্বশ্রেষ্ঠ কথাসাহিত্যিক 1875 সালে ভারতের অন্যতম জাতীয় সঙ্গীত "বন্দে মাতরম" রচনা করেন এবং 1872 সালে "বঙ্গদর্শন" নামে একটি সাহিত্য প্রকাশ ও চার বছর এই পত্রিকা সম্পাদনাও করেন । বঙ্কিমচন্দ্রের অধিকাংশই রচনা "বঙ্গদর্শন" পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল । 

1894 সালের এপ্রিল মাসের 8 তারিখে কলকাতা শহরে এই চিরস্মরণীয় কথাসাহিত্যিক বহুমুত্র রোগে আক্রান্ত হয়ে ইহলোক ত্যাগ করেন । সাহিত্যসম্রাটের তিরোধানে বাংলা সাহিত্যাকাশ থেকে এক দীপ্তিমান নক্ষত্রের পতন হয় ।

কৃতজ্ঞতা - Shining Subir.

নীচে তার রচনার ওপর ক্লিক করলে নির্দিষ্ট বইটি পেতে পারেন।

অ - ঔ ক - ন প - ম, শ স, ষ, র, ল, য, হ, ক্ষ

















































































































একটি আবেদন - 
কেউ যদি কোনো বই/ পত্রিকা স্ক্যান করতে / দিতে চান 
বা সূচীপত্র ও.সি.আর. করতে চান - 
তাহলে নিচের ইমেলে যোগাযোগ করবেন 

babuipakhi819@gmail.com 

No comments:

Post a Comment