বিশেষ ঘোষণা

বিশেষ ঘোষণাঃ কারিগরি কারণ বশতঃ বেশ কিছু বইয়ের লিঙ্ক কাজ করছে না। সেগুলো ধীরে ধীরে ঠিক করে দেওয়ার কাজ চলছে। কিছু বই অপেক্ষাকৃত ভালো করতে গিয়ে একটু সময় লাগছে। ফেসবুক গ্রুপে প্রত্যেক আপডেট জানিয়ে দেওয়া হবে। মাঝে মাঝে নতুন বই দেবার ও চেষ্ট চলছে ।

শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়

বাংলা ভাষার সমস্ত লেখক - এক জায়গায় ক্রমানুসারে


শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়

জন্ম - ২১শে মার্চ, ১৯০১                                                                        মৃত্যু - ২রা জানুয়ারী, ১৯৭৬
অন্ডাল, বর্ধ্মান, প.বঙ্গ, ভারত                                                                                কলকাতা, ভারত

এক এক সময় মনে হয় আমি যেরকম ভাবে গল্প বলি (লিখি), 
এমনটি আর কেউ লিখতে পারে না। বুড়ো বয়েসে এরকম ভাবনা ভালো হয়।
আমার স্ত্রীকে একদিন এই কথা বলেছিলাম। স্ত্রী বললে, আমার কাছে বললে সেই ভালো,
সার কারও কাছে এ-কথা বোলো না। লোকে ভাববে তুমি দাম্ভিক। বললাম, ভাবুক।
যারা গল্প লেখে তাদের সবাইকে আমি ভালোবাসি। 'যে জন গৌরাঙ্গ ভজে - সে যে আমার ভাই।'

বাংলা সাহিত্যে সর্বপ্রথম কয়লা খনি-শ্রমিকদের জীবনযাত্রা নিয়ে সার্থক গল্প " কয়লাকুঠির দেশে " রচনা করে বাংলার পাঠকমহলে বিশেষ খ্যাতিলাভ করেন শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায় এবং এই গল্পটি সেইসময়ে মাসিক " বসুমতী " পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল । এছাড়াও শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায় সাঁওতাল-বাউরি কুলি-কামিন ধাওড়াদের অজ্ঞাত জীবনযাত্রা নিয়ে একাধিক গল্প-উপন্যাস রচনা করেন । শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায় ছিলেন কথাসাহিত্যিক , চলচিত্র-পরিচালক এবং পত্রিকা-সম্পাদক । 

এই শ্রদ্ধেয় কথা-সাহিত্যিক 1901 সালে মার্চ মাসের 21 তারিখে বর্তমান ভারতবর্ষের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের অন্তর্গত বর্ধমান জেলার অণ্ডাল গ্রামে মাতুলালয়ে ভুমিষ্ঠ হন । এই শ্রদ্ধেয় কথাসাহিত্যিকের পিতার নাম ধরণীধর মুখোপাধ্যায় , ইনি ছিলেন অঙ্কন শিল্পী , কুমোর ও যাদুকর এবং মাতার নাম হেমবরণী দেবী । এই বরণীয় কথাসাহিত্যিকের পৈতৃক নিবাস এই প্রদেশের বীরভূম জেলার রূপসীপুর গ্রামে অবস্থিত ছিল এবং মাত্র তিন বছর বয়সে মাতা হেমবরণী দেবীর তিরোধান হলে তিনি তার মাতামহ বর্ধমানের ধনশালী কয়লা ব্যবসায়ী মৃত্যুঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় আশ্রয়ে প্রতিপালিত হন । এই বরণীয় কথাসাহিত্যিক স্থানীয় মাইনর স্কুলে বিদ্যাশিক্ষা আরম্ভ করেন এবং এই স্কুলে পাঠক্রম সমাপ্ত করে হাই স্কুলে বিদ্যাশিক্ষা করার জন্য রানীগঞ্জে এসে সিয়ারসোল স্কুলে ভর্তি হন । এই স্কুলে পাঠরতা থাকাকালীন " বিদ্রোহী " কবি কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে এই খ্যাতনামা কথাসাহিত্যিকের পরিচয় হয় এবং দুজনে ছিলেন অভিন্নহৃদয় বন্ধু । প্রি-টেস্ট পরীক্ষার সময় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দামামা বাজতেই এই খ্যাতনামা কথাসাহিত্যিক কাজী নজরুল ইসলামের সাথে পালিয়ে গিয়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহন করার জন্য আসানসোলে আসেন এবং ডাক্তারি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলে তিনি বাতিল হন কিন্তু নজরুল ডাক্তারি পরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়ে যুদ্ধের কাজে যোগদান করেন । পল্টন থেকে ফিরে এসে এই মাননীয় কথাসাহিত্যিক নাকোড়বান্দা হাই স্কুলে ভর্তি হন এবং এই স্কুল থেকে তিনি এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে টাইপরাইটিং ও শর্টহ্যান্ড শিক্ষালাভের জন্য বাগবাজারের কাশিমবাজার পলিটেকনিক কলেজে ভর্তি হন । শর্টহ্যান্ড ও টাইপরাইটিং শিখে এই মাননীয় কথাসাহিত্যিক কলকাতায় চাকুরির ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হয়ে শেষপর্যন্ত কুমারডুবি কয়লাখনিতে চাকুরি গ্রহন করেন । বাল্যকাল থেকেই এই পূজনীয় কথাসাহিত্যিক সাহিত্যানুরাগী ছিলেন বলে অল্প কয়েকদিন চাকুরি করার পর সেই চাকুরি পরিত্যাগ করেন এবং পুরো সময়ের জন্য নিজেকে সাহিত্যকর্মে নিয়োগ করেন । কুমারডুবি কয়লাখনিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা এই মাননীয় কথাসাহিত্যিককে সাহিত্য রচনা করার ক্ষেত্রে প্রভূত সাহায্য করেছিল । " বাঁশরী " পত্রিকায় এই স্বনামধন্য কথাসাহিত্যিকের রচিত প্রথম গল্প " আত্মঘাতীর ডায়েরি " প্রকাশিত হলে ধনী মাতামহের সাথে তার মনোমালিন্য শুরু হয় তখন তিনি মাতামহের আশ্রয়স্থল ত্যাগ করে কলকাতায় চলে আসেন । কলকাতায় এসে কিছুদিন পানের ব্যবসা করার পর এই খ্যাতনামা কথাসাহিত্যিক পুনরায় নিজের পৈতৃক নিবাস রূপসীপুরে ফিরে আসেন এবং এইসময় তার মাতামহের তিরোধান হলে তিনি তার মাতামহীর সাথে কাশীতে গমন করে সেখানে "অ্যাংলো বেঙ্গলী স্কুলে" বাংলার শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন । পরবর্তীকালে এই খ্যাতনামা কথাসাহিত্যিক কাশী থেকে ফিরে এসে কলকাতার কালীঘাটে স্থায়ীভাবে বসবাস আরম্ভ করেন এবং বাংলা সাহিত্যকে সম্পুর্ণভাবে জীবিকা হিসাবে গ্রহন করেন । কলকাতায় আগমন করে এই পূজনীয় কথাসাহিত্যিক অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, প্রেমেন্দ্র মিত্র, মুরলীধর বসু, প্রবোধকুমার সান্যাল, পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ মনীষীদের সান্নিধ্য লাভ করেন এবং পরবর্তীকালে তিনি "কালিকলম" ও "কল্লোল" পত্রিকাগোষ্ঠীর অন্যতম সাহিত্যিক হিসাবে নিজেকে প্রকাশ করেন । কবিতা রচনার মধ্য দিয়ে এই পূজনীয় কথাসাহিত্যিক বাংলা সাহিত্যের আঙিনায় প্রবেশ করলেও পরবর্তীকালে তিনি "কথাসাহিত্যিক" হিসাবে বাংলা সাহিত্যজগতে খ্যাতি লাভ করেন । 

এই সম্মাননীয় কথাসাহিত্যিক গল্প ও উপন্যাস মিলিয়ে প্রায় দেড়শত গ্রন্থ রচনা করেছেন, তার মধ্যে - কয়লাকুঠির দেশে, বন্দী, আজ শুভদিন, শহর থেকে দূরে, মানে না মানা, ডাক্তার, আমি বড়ো হব, অপরূপা, সারারাত, এক মন দুই দেহ, ক্রৌঞ্চমিথুন, রূপং দেহি, কনে চন্দন, স্বনির্বাচিত গল্প, লোকরহস্য, প্রভৃতি গল্পগ্রন্থ এবং মাটির ঘর (1918), ঝড়ো হাওয়া (1923), বাংলার মেয়ে (1925), জোয়ার ভাটা (1926), পুর্ণচ্ছেদ (1929), অনাহুত (1932), অনিবার্য (1932) প্রভৃতি উপন্যাস ও যে কথা বলা হয়নি ( চলচিত্র সম্পর্কে স্মৃতিকথা ) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য । এই সম্মাননীয় কথাসাহিত্যিক নিজের দুইটি স্মৃতিকথা "আমার বন্ধু নজরুল" ও "কেউ ভোলে না কেউ ভোলে" রচনা করেছেন এবং দীর্ঘদিন "কালিকলম" পত্রিকা সম্পাদনা করা ছাড়াও তিনি সাপ্তাহিক "সাহানা" ও "গল্পভারতী" নামে আরো দুইটি পত্রিকা সম্পাদনা করেন । সেই সময় বিখ্যাত সব পত্রিকা ভারতবর্ষ, প্রবাসী, বিচিত্রা, মাসিক বসুমতী, কল্লোল, কালিকলম, বঙ্গবাণী, বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা, সংহতি, ছায়া, সাহানা প্রভৃতি পত্রিকায় এই প্রথিতযশা কথাসাহিত্যিকের রচিত গল্পগুলি একের পর এক প্রকাশিত হতে থাকে । এই প্রথিতযশা কথাসাহিত্যিক নিজেও অনেকগুলি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন এবং তার রচিত অনেকগুলি গল্প ও উপন্যাস ছায়াছবিতে রূপায়িত হয়েছে, তার মধ্যে - পাতালপুরী, নন্দিনী, শহর থেকে দূরে, মানে না মানা, বন্দী, অভিনয় নয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। পরে এই মহামান্য কথাসাহিত্যিক চলচ্চিত্রজগৎ ত্যাগ করে কলকাতা বেতার কেন্দ্রের নাট্যবিভাগে যোগদান করে অনেকগুলি নাটক প্রযোজনা ও পরিচালনা করেন, সেই বেতার নাটকগুলির মধ্যে - গ্রহচক্র, কবি, কালরাত্রি, নারায়ণী, রাহু, নিরুদ্দেশ প্রভৃতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য । এই মহামান্য কথাসাহিত্যিক সাহিত্য ও চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য 1960 সালে "আনন্দ" পুরস্কার, 1966 সালে "উল্টারথ" পুরস্কার, 1968 সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এবং বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে "ডি লিট" উপাধি, 1976 "মরণোত্তর শরৎ" এবং 1959 সালে প্রফুল্ল কুমার ও সুরেশ চন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার লাভ করেন । 1972 সালে এই কীর্তিমান কথাসাহিত্যিক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন । 

1976 সালের জানুয়ারি মাসের 2 তারিখে শুক্রবার বেলা দেড়টায় কলকাতা শহরে এই চিরস্মরণীয় কথাসাহিত্যিকের তিরোধান হয় । "কয়লাকুঠির দেশে" - গল্পটি সম্পর্কে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই চিরস্মরণীয় কথাসাহিত্যিককে উদ্দেশ্য করে যা বলেছিলেন, সেই কথাটাই উল্লেখ করে আমি আজকে লেখা শেষ করবো - "আমরা দোতলার জানলা দিয়ে গরীবদের দেখছি, তুমি তাদের সঙ্গে মিলে মিশে একাত্ম হয়ে তাদের সুখ দুঃখ অনুভব করেছ গভীরভাবে । তোমার লেখা আমার ভালো লাগে । সাহিত্য তোমায় স্থায়ী আসন দেবে।"

কৃতজ্ঞতা - Shining Subir.

নীচে তার রচনার ওপর ক্লিক করলে নির্দিষ্ট বইটি পেতে পারেন।

অ - ঔ ক - ন প - ম, শ স, ষ, র, ল, য, হ, ক্ষ










































































































একটি আবেদন - 
কেউ যদি কোনো বই/ পত্রিকা স্ক্যান করতে / দিতে চান 
বা সূচীপত্র ও.সি.আর. করতে চান - 
তাহলে নিচের ইমেলে যোগাযোগ করবেন 

babuipakhi819@gmail.com 

No comments:

Post a Comment