বিশেষ ঘোষণা

বিশেষ ঘোষণাঃ কারিগরি কারণ বশতঃ বেশ কিছু বইয়ের লিঙ্ক কাজ করছে না। সেগুলো ধীরে ধীরে ঠিক করে দেওয়ার কাজ চলছে। কিছু বই অপেক্ষাকৃত ভালো করতে গিয়ে একটু সময় লাগছে। ফেসবুক গ্রুপে প্রত্যেক আপডেট জানিয়ে দেওয়া হবে। মাঝে মাঝে নতুন বই দেবার ও চেষ্ট চলছে ।

ময়ূখ চৌধুরী

বাংলা ভাষার সমস্ত লেখক - এক জায়গায় ক্রমানুসারে

ময়ূখ চৌধুরী


জন্ম - ১৯২৬                                                                                      মৃত্যু - ৩০শে অক্টোবর, ১৯৯৬
ঢাকা, বাংলাদেশ                                                                                         কলকাতা, প.বঙ্গ, ভারত
মূল নাম ঃ শক্তিপ্রসাদ রায়চৌধুরী

ছদ্মনাম ঃ  ময়ূখ চৌধুরী, প্রসাদ রায়, সুত্রধর গুপ্ত, আত্মনাম গুপ্ত, রাজা রায়, আলোক চৌধুরী।

১৯২৬শে ময়ূখ চৌধুরীর জন্ম। আদি বাসিন্দা বাংলাদেশের ঢাকা জেলার। বাবা সরকারি চাকরী করতেন, মা ছিলেন শিক্ষিকা। কৈশোরেই কলকাতা আগমন। 

ওনার খুব কাছের বন্ধু লেখক মঞ্জিল সেন লিখছেন 'আমাদের বাড়ির পেছন দিকেই ছিল তেতলা একটা বাড়ি। একতলায় মস্ত একটা চৌবাচ্চা, কানায় কানায় জলে ভর্তি। দেখতাম আমারই বয়সী রোগা মতো একটি ছেলে হাফ প্যান্ট পরে চৌবাচ্চার ধারে দাঁড়িয়ে টারজানের মতো আঁ আঁ বিকট শব্দে জলে ঝাঁপ দিত। পরে ছেলেটির সঙ্গে আলাপ হল, নাম শক্তিপ্রসাদ রায় চৌধুরী। '

১৯৩২শে মুক্তি পাওয়া Johnny Weissmuller অভিনীত টারজানের ছবিটি হয়ত বালক ময়ূখের মনে প্রভাব ফেলেছিল, অ্যাডভেঞ্চারের নেশা লেগেছিল সেই বয়সেই। সে কারণেই হয়তো পরবর্তীকালে তাঁর অজস্র কাজে জন্তু জানোয়ার জঙ্গল আর অ্যাডভেঞ্চার ঘুরে ফিরে এসেছে। 

ম্যাট্রিক পাস করলেন ১৯৪২ সালে। মঞ্জিল সেন লিখছেন,' আমি ১৯৪২ সালে ম্যাট্রিক পাশ করি, ও (ময়ূখ চৌধুরী) মিত্র স্কুল থেকে সেই বছরই পাশ করেছিল। শুনেছিলাম ও নাকি বাংলায় লেটার পেয়েছিল।তখন লেটার পাওয়াটাই দুরূহ ছিল, তাও আবার বাংলায়।' এহেন ছাত্র যে পরবর্তীতে স্বচ্ছন্দ টান টান গদ্য রচনায় সিদ্ধহস্ত হয়ে উঠবেন তাতে আর সন্দেহ কি।

১৯৪৩ সালে ভর্তি হলেন গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজে। ময়ূখের আর এক অন্তরঙ্গ বন্ধু শিল্পী অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়-র লেখা থেকে জানা যাচ্ছে, শিক্ষক হিসাবে ময়ূখ পেয়েছিলেন জয়নুল আবেদিন, রমেন চক্রবর্তী, অতুল বোস-র মত চিত্রকরদের। সহপাঠীদের মধ্যে ছিলেন আর এক দিকপাল শিল্পী রণেন আয়ন দত্ত।

অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় লিখছেন, 'রণেন আয়ন দত্ত ছিলেন ক্লাসের ফার্স্ট বয়, দারুণ আঁকতো। শক্তির আঁকাও খারাপ ছিল না, জীবজন্তুর ড্রয়িং আঁকার প্রবণতা বেশি ছিল আর সে সব ড্রয়িং গুলো হতো জীবন্ত। মুশকিল হল ও মনে করতো ও ক্লাসে সবচেয়ে ভালো আঁকে, কিন্তু মাস্টারমশাইরা পক্ষপাতিত্ব করে রণেনকে ফার্স্ট করে দিচ্ছেন।...ও যে খামখেয়ালী আর গোঁয়ার ধরনের মানুষ তা ওর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে এতদিন মিশে ভালোই বুঝতাম, এবার সেটা মোক্ষম বুঝলাম ফিফথ ইয়ারে উঠে ফাইনাল পরীক্ষা না দিয়ে ও কলেজ ছেড়ে দেওয়ায়। '

এ ঘটনা থেকে ময়ূখের মেজাজের খানিকটা আন্দাজ পাওয়া যায়। যে জন্যই বহুবার বহুজনের সাথে তাঁর মনোমালিন্য ঘটে। যাই হোক কলেজ ছাড়লেন। সে সময় সিনেমার ব্যানার হাতে আঁকতে হতো। ময়ূখ কলেজ ছেড়ে লেগে পরলেন সেই কাজে। ১৫/২০ এমনকি ৩০ ফুট লম্বা ব্যানারে ছবি আঁকতে লাগলেন।

ময়ূখ চৌধুরীর আর এক কাছের মানুষ লেখক নির্বেদ রায় লিখছেন' আর্ট কলেজ থেকে বেরিয়ে আসার পর উনি মধ্য কলকাতার হাই সাহেবের স্টুডিওতে কাজে ঢুকলেন; সেটা ফটো তোলার স্টুডিও নয় ওখানে সিনেমার ব্যানার আঁকার কাজ হত। এই কাজে হাতে খড়ি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রসাদ সেখানকার বোহেমিয়ান জীবনে, বলতে গেলে কিছুটা বেহিসাবি জীবনে অভ্যস্ত হয়ে উঠলেন। হাই সাহেবের স্টুডিও পর কিছুদিন কাজ করেছিলেন কালীঘাটের সত্যেনবাবুর স্টুডিওতে। সত্যেনবাবুর স্টুডিও থেকে প্রসাদ গেলেন সুশীল ব্যানারজির সংস্থায় কাজ করতে যিনি নিজেও ছিলেন অসাধারণ শিল্পী, যার আঁকা সিনেমার ব্যানার বা হোডিংগুলো এক একটা অসামান্য শিল্পকর্ম হয়ে উঠতো। ...সুশীলবাবু প্রসাদকে প্রকাশনা জগতের সঙ্গে যুক্ত হত্রে পরামর্শ দেন, তাঁর প্রত্যয় ছিল মানুষটার প্রতিভা সিনেমার ব্যানার বা দেয়াল চিত্র আঁকার কাজে অপব্যায় হচ্ছে।'

সুশীলবাবুর মাধ্যমে আলাপ হয় সত্যজিৎ রায়ের সাথে। ১৯৬২ সালে শুরু হয় সন্দেশ পত্রিকায় কাজের। অলংকরণ, কমিকস তার সাথে গল্প লেখাও শুরু করলেন ময়ূখ। অলংকরণ করতেন প্রসাদ রায় নামে, ময়ূখ চৌধুরী নামে লিখতেন এবং কমিকস করতেন।

শক্তিপ্রসাদ রায় চৌধুরী থেকে পাল্টে গেলেন দুটি পৃথক পরিচয়ে। মঞ্জিল সেনের লেখায় পাচ্ছি, 'আমরা ওকে শক্তি নামেই জানতাম। পরে এক সাহিত্যিক বন্ধুর কাছে শুনেছিলাম কি একটা ঘটনায় পুলিশ ওর খোঁজ করছিল, বোধহয় মারামারির ঘটনা। খুব সাহসী ছিল শক্তি, অন্যায় দেখলে রুখে দাঁড়াতো। ওই ঘটনার পরে ও রাতারাতি শক্তিপ্রসাদ রায় চৌধুরীকে সংক্ষেপে প্রসাদ রায় করে নিয়েছিল। তখন বোধহয় এটা খুব কঠিন ব্যাপার ছিল না।' প্রসঙ্গত, তিনি আত্মনাম গুপ্ত, সূত্রধর গুপ্ত, রাজা রায়, ধনঞ্জয় রায় ইত্যাদি নামেও কাজ করেছিলেন।

মঞ্জিল সেন আরও লিখছেন, 'ওর সাহস ছিল অসাধারণ। সে সময়( দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়) ব্ল্যাক আউট আর ব্যাফল ওয়ালের জন্য কলকাতা বিখ্যাত। হঠাৎ বোমা পড়লে ওই দেওয়ালের পিছনে আশ্রয় নিতে হবে। প্রসাদ সন্ধের পর একা একা চৌরঙ্গীতে ঘুরতে যেত। একবার ওদিকে এমন একটা দেওয়ালের পেছনে ও দুজন লোককে এক অ্যাংলো ইন্ডিয়ান তরুণকে ছোড়া নিয়ে আক্রমণ করতে দেখে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ওর পকেটে থাকতো একটা ছোটো হাতুড়ি। বাঁয়া তবলা ঠোকার জন্য যেমন ছোটো ছোটো হাতুড়ি ব্যাবহার করা হয় তেমনি। যদি বিপদে তবে ওটা দিয়ে আত্মরক্ষা করবে এই ছিল উদ্দেশ্য। ওই হাতুড়ি দিয়ে লোক দুজনকে জখম করে অ্যাংলো ইন্ডিয়ান ছেলেটিকে ও বাঁচিয়েছিল।' যৌবনে বক্সিংও শিখেছিলেন তিনি। পরবর্তীতে ছেড়ে দিলেও যথেষ্ট অনুরাগী ছিলেন বক্সিং-এর। 

এ ঘটনাগুলো থেকে মনে হয় তিনি ছিলেন বলিষ্ঠ সাহসী আপসহীন চরিত্রের একটি মানুষ। ফাঁকিতে বিশ্বাস করতেন না, দিনের পর দিন কঠিন পরিশ্রম আর অধ্যাবসায় দিয়েই আয়ত্ব করেছিলেন তাঁর এই অসাধারণ অঙ্কন শৈলী। চিড়িয়াখানায় তাঁর ছিল নিত্য যাতায়াত, গভীর মনোযোগের সাথে জীবজন্তুর স্কেচ করে গেছেন দিনের পর দিন। সাহসী মানুষটির মতো সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছেন কমিকস নির্মাণের ফ্রেমে, ভাঙচুর করেছেন নানাভাবে, ফলে তাঁর কমিকসে যে গতিশীলতা এসেছে তাঁর জুড়ি সম্ভবত বাংলা কমিকসের ক্ষেত্রে আর কারও নেই। বাবা - মা মারা যাবার পরে একা হয়ে গিয়েছিলেন। খোঁজ রাখতেন না বিবাহিতা বোনের। একক জীবনের সবটুকু ঢেলে দিয়েছিলেন আঁকা আর লেখার কাজে।

সন্দেশ থেকে দেব সাহিত্য কুটির, কিশোর ভারতি সমস্ত শিশু কিশোর পত্রিকা গুলিতেই ময়ূখ চৌধুরীর উপস্থিতি উজ্জল হয়ে আছে তাঁর লেখা আঁকা আর কমিকসে। যদিও সেকাজ হয়তো খুব সহজ ছিল না। মাঝে মাঝেই মতান্তর ঘটতো প্রকাশকদের সাথে। 

১৯৯৬ সালের ২রা জুন আজকাল পত্রিকায় 'কমিকস যখন গল্প বলে' নামে একটি লেখা ছাপা হয় ময়ূখ চৌধুরীর। একটি বইতে সেটি রিপ্রিন্ট হয়েছিল, BTT-তে ব্লগার বন্ধু ওয়াকার(ওয়াকারকে ধন্যবাদ) সেটি upload করেছিল কিছুদিন আগে। সেখানে তিনি বাংলা কমিকস ছাড়াও বিদেশী কমিকস শিল্পীদের সম্পর্কে লিখেছিলেন, তাঁর মধ্যে Alex Remand, John Prentice, Barn Hogarth ইত্যাদি শিল্পীদের নাম উঠে এসেছিল। মূলত realistic ছবি নিয়েই তিনি আলোচনা করেছিলেন। ভালো গল্প ছাড়া যে ভালো কমিকস হয়না একথা তাঁর লেখায় বার বার উঠে এসেছে।

কোনও এক লেখক বন্ধুর সাথে এই নিয়ে কিছু কথোপকথন রয়েছে এই লেখায়, 'আমার এক বন্ধু স্থানীয় লেখক একবার তাঁর লেখা সম্পর্কে আমার মতামত জানতে চাইলেন। আমার বক্তব্য তাঁর ভালো লাগল না। বন্ধুবর ক্রুদ্ধ স্বরে বললেন, তুমি তো ছবি আঁকো, গল্পের ব্যাপারে তুমি কতটা বোঝো ? হেসে বললাম শুধু ছবি নয় গল্প লেখাও আমার অন্যতম পেশা। আমার কমিকস সম্পর্কে পশ্চিমবঙ্গের দুটি বিখ্যাত দৈনিক উচ্ছসিত প্রশংসা করেছে সে কথা কি তুমি জান না? বন্ধু রেগে বললেন, সেটা তো কমিকস। গল্প নয়। আমি বললাম কমিকস যদি ভালো হয় তবে সেখানে গল্পটাও ভালো হয়েছে বলতে হবে। তাছাড়া ছবি আঁকলে কেউ গল্প লিখতে পারবে না এমন নিয়ম নেই। সত্যজিৎ রায়ের উদাহরণ তো হাতের কাছেই রয়েছে। বন্ধুটি হিংস্র ভাবে বললেন, সবাই সত্যজিৎ রায় হয় না। আমি বললাম, ঠিক কথা। কিন্তু সবাই ময়ূখ চৌধুরী হয়না একথাও সত্যি। স্বীকার করছি, ওইভাবে আমার তরফ থেকে অহং প্রকাশ করা অনুচিত- কিন্তু অপমানিত হয়ার ফলে আমিও অসংযত হয়ে পড়েছিলাম। আশা করি, পরিবেশ বিবেচনা করে সুধী পাঠক আমার সাময়িক অসংযম ক্ষমা করবেন।'

কমিকসের ক্ষেত্রে ভালো গল্প যে বিশেষ দরকার তা তাঁর কমিকস গুলি পড়লেই বোঝা যায়। নিজে ভালো গল্প লিখতেন তাই তাঁর কমিকসের গল্পও ছিল সমান আকর্ষণীয়। যদিও বেশিরভাগ গল্পই ছিল সত্য ঘটনা অবলম্বনে, তা সে অ্যাডভেঞ্চারের গল্পই হোক বা ইতিহাসের।

এই প্রসঙ্গে জানাই তিনি গল্প ছাড়া ছড়াও লিখেছেন, লিখেছেন কবিতাও, ছড়া রয়েছে তাঁর কমিকসে আর কবিতাটি ছাপা হয়েছিল নবকল্লোল পত্রিকায়। আজকালের ওই লেখাতেই বাংলা কমিকস আর তাঁর প্রকাশক নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি লিখেছেন, 'আমরা সকলেই অর্থ উপার্জন করতে চাই - কিন্তু দেশ ও জাতির প্রতি আমাদের যে বিশেষ দায়বদ্ধতা আছে - বিশেষত অপ্রাপ্তবয়স্ক পাঠককে ভুল ও বিকৃত তথ্য পরিবেশন করা যে অত্যন্ত অনুচিত কর্ম, সেটা কখনই ভুলে যাওয়া উচিত নয়। অথচ ভালর সাথে খারাপ মিশেল দিতে অতিশয় দক্ষ যে প্রকাশকটির কথা উল্লেখ করছি, তিনি এই দায়িত্বটুকুও স্বীকার করেন না। একটি উদাহরণ দিচ্ছি--
একটি পাঁচমিশেলি কমিকসের বইতে 'কোমোডো ড্রাগন' নামে সল্প পরিচিত একটি সরীসৃপের কাহিনী রয়েছে। কাহিনীটি মন গড়া গল্প নয় - বাস্তব সত্যের অপর প্রতিষ্ঠিত প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণী থেকেই বাংলা ভাষায় ওই কমিকস রচনা করেছিলেন এই বাংলার এক কমিকস-রচয়িতা। ওই কমিকস-রচয়িতাকে না জানিয়েই পাঁচমিশেলি বইতে ওই কমিকসটি ছাপা হয় এবং প্রচ্ছদচিত্রে অন্য এক শিল্পীকে দিয়ে কোমোডো ড্রাগনের যে ছবি আঁকানো হয়, সেটি দেখে অত্যন্ত হিংস্র ও অত্যন্ত ভয়ঙ্কর কোমোডো ড্রাগন ও যে আতঙ্কে বিহ্বল হয়ে পড়বে সে বিষয়ে সন্দেহ নাস্তি।'


আরও লিখেছিলেন, বাঙালি প্রকাশকরা যেনতেন প্রকারেণ অর্থ উপার্জনের জন্য উদগ্রীব - সত্যিকারের ভাল জিনিস পরিবেশন করে কমিকসের মান উন্নত করতে তারা ইচ্ছুক নন।' ময়ূখ চৌধুরী এইসব প্রকাশকের সাথে অনেক সময়ই এক মত হতে পারেন নি।

মঞ্জিল সেনের লেখা থেকে, 'কিশোর ভারতীর সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ায় পত্রিকায় ওনার ধারাবাহিক প্রকাশ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তবে 'সংখ্যার নাম চার' নিউ বেঙ্গল বা দেব সাহিত্য কুটির থেকে সম্ভবত কিশোর উপন্যাস হিসাবে বেরিয়ে ছিল, কমিকস হিসাবে নয়। 'প্রফেসর ত্রিবেদী'র বোধহয় অকাল মৃত্যু ঘটেছিল।'

নির্বেদ রায় লিখছেন, 'পেশাগত দিক দিয়ে অনেক সময়ই আপস করতে পারতেন না ময়ূখ। নিজের কাজ নিয়ে তাঁর একটা অভিমানের জায়গা ছিল। হঠাৎ হঠাৎ প্রকাশনার কাজ স্থগিত রেখে চলে যেতেন তাঁর পুরোন কাজের জায়গায় আবার কাজ করতে। সংসার বিহীন, নিঃসঙ্গ অবিবাহিত জীবন, অনেকদিনই হয়তো পাউরুটি ঘুগনি দিয়ে প্রাত্যহিক আহার নিস্পন্ন হয়েছে।'

আজকাল পত্রিকার রবিবাসরীয়তে লেখবার কয়েক মাস পরেই এই শিল্পী চিরবিদায় নেন।

চার দশকেরও বেশি সময় ধরে কেমন করে বাংলার শিশু কিশোর এমনকি প্রাপ্তবয়স্ক পাঠকেরও মন জয় করেছিলেন। মৃত্যুর প্রায় দুদশক পরেও তিনি প্রাসঙ্গিক, আজও বাংলা কমিকসের জগতে যে নক্ষত্রটি উজ্জল হয়ে রয়েছে তাঁর নাম ময়ূখ চৌধুরী। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে কেমন করে বাংলার শিশু কিশোর এমনকি প্রাপ্তবয়স্ক পাঠকেরও মন জয় করেছিলেন। মৃত্যুর প্রায় দুদশক পরেও তিনি প্রাসঙ্গিক, আজও বাংলা কমিকসের জগতে যে নক্ষত্রটি উজ্জল হয়ে রয়েছে তাঁর নাম ময়ূখ চৌধুরী।

তাঁর বিখ্যাত লেখাগুলির মধ্যে আছে পলাতক, ভয়াবহ শিকার কাহিনী, নরকের প্রহরী, কায়না, সংখ্যার নাম চার, নিশীত রাতের আহ্বান, ডুয়েল, গল্প হলেও গল্প নয়, মরণ খেলার খেলোয়াড়, দেবী দর্শন, খাপে ঢাকা তরবার, বনের ছেলে টারজা্‌ রবিনহুডের নানা কমিক্স প্রভৃতি।

তাঁর আর এক অসাধারন সৃষ্টি ক্যালিগ্রাফি। কলম বা ব্রাশ সহযোগে নামাঙ্কন পদ্ধতিকে বলে ক্যালিগ্রাফি। কাহিনীর সারবস্তুর ইঙ্গিত দেয় এক ক্যালিগ্রাফি। বাংলা কমিক্সের ক্যালিগ্রাফিতে ময়ূখ চৌধুরীর অবদান অনস্বীকার্য। যেমন 'মবোগো'র 'ম'টি কেপ-বাফেলোর শিং-এর মতো বাঁকানো। আবার 'খাপে ঢাকা তরবার' এর 'ত'এর প্রান্তভাগ 'র' এর শীর্ষভাগের সঙ্গে মিশে এক অর্ধচন্দ্রাকৃতি পথের সৃষ্টি করেছে, যা তলোয়ার চালালে তৈরী হয়। 'জলদস্যুর কবলে রবিনহুড'-এর 'এ' কার বাঁকানো তলোয়ারের মতো। 'মহাকালের মন্দির'-এর 'মন্দির' শব্দটি এমন ভাবে লিখেছিলেন যেন এক অতি প্রাচীন মন্দিরের দেওয়ালে অজস্র ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে।

১৯৯৬ সালের ৩০শে অক্টোবর শম্ভুনাথ পন্ডিত হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।


নীচে তার রচনার ওপর ক্লিক করলে নির্দিষ্ট বইটি পেতে পারেন।

অ - ঔ ক - ন প - ম, শ স, ষ, র, ল, য, হ, ক্ষ


































































































একটি আবেদন - 
কেউ যদি কোনো বই/ পত্রিকা স্ক্যান করতে / দিতে চান 
বা সূচীপত্র ও.সি.আর. করতে চান - 
তাহলে নিচের ইমেলে যোগাযোগ করবেন 

babuipakhi819@gmail.com 

No comments:

Post a Comment