বাংলা ভাষার সমস্ত লেখক - এক জায়গায় ক্রমানুসারে
পঞ্চানন ঘোষাল
জন্ম - ১৯০৭ মৃত্যু - ১৯শে জানুয়ারী , ১৯৯০
নৈহাটি, উ. ২৪ পরগনা, প.বঙ্গ, ভারত কলকাতা, ভারত
পঞ্চানন ঘোষাল
নৈহাটি, উ. ২৪ পরগনা, প.বঙ্গ, ভারত কলকাতা, ভারত
পঞ্চানন ঘোষাল । ভারতীয় অপরাধ সাহিত্যের পথিকৃত । কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে বিস্মৃতপ্রায় । স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ যাঁর লেখনীর অনুপ্রেরণা, তাঁর সাহিত্য কর্মের দিকে তাকাতেই হয় । কিন্তু তাঁর আগে জানা প্রয়োজন ব্যক্তি পঞ্চাননকে । ১৯০৭ সালে উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটি অঞ্চলের মাদরাল গ্রামে তাঁর জন্ম । জমিদার পরিবারের সন্তান ছিলেন । জুলজিতে এম এস সি এবং অপরাধ বিজ্ঞানে ডক্টরেট ছিলেন তিনি । কর্মজীবনে ডেপুটি কমিশনার অব পুলিশ হিসেবে অবসর নেন ।
কেমন ভাবে তিনি এলেন পুলিশে চাকরি করতে ? ‘আমি যখন পুলিশ ছিলাম’ বইটিতে তিনি লিখছেন- “…ইউনিভার্সিটির শেষ পরীক্ষা শেষ হয়েছে । এম এস সি পরীক্ষাতে নিজ বিষয়ে প্রথম হয়েছি । বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী ড. গিরীন্দ্র শেখর বসুর তত্ত্বাবধানে অ্যাবনরমাল সাইকোলোজিতে গবেষণা করছিলাম পঁচাত্তর টাকা মাসে স্কলারশিপেতে । জীবনের উদ্দেশ্য এই যে ভবিষ্যতে একজন প্রফেসর হব। জীবনের অন্য উদ্দেশ্য ছিল একজন সাহিত্যিক হওয়া । ততদিনে তৎকালীন একটা বিখ্যাত পত্রিকা কল্লোলে আমার একটা গল্পও মুদ্রিত হয়েছে । কিন্তু ইংরাজিতে একটা প্রবাদ থেকেছে । ম্যান প্রপোসেস গড ডিসপোজেশ ; পরিশেষে আমাকে পুলিশে ঢুকতে বাধ্য হতে হল । বিশ্বভারতীর বর্তমান ভাইস চ্যান্সেলর ড: প্রতুল গুপ্ত এবং কনিষ্ঠ ভ্রাতা ড: হীরন্ময় তখন প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্র । প্রতুল গুপ্তের সম্পাদিত ঝর্ণা পত্রিকাতে আমরা সকলে লিখি, সেই সূত্রে প্রতুলবাবুর কাছ থেকে কাজী নজরুলের সদ্য প্রকাশিত ‘অগ্নিবীণা’ পেলাম ও তা পড়ে মুগ্ধ হলাম । এরপর আমাদের দুই ভ্রাতার একটু দুর্মতি হল । আমরা ভুলে গিয়েছিলাম যে, আমাদের দুইজনের জন্ম এক পুরুষানুক্রমে খেতাবধারী ও উচ্চপদী এক রাজভক্ত জমিদার পরিবারে। আমাদের পিতামহ রায় বাহাদুর কমলাপতি (১৮২০–১৯০৮) প্রথম ভারতীয় পুলিশ সুপার ছিলেন । শুধু তাই নয়, তখন আমার জেঠামশাই রায় বাহাদুর কালসদয়, যিনি তখন কলকাতা পুলিশের এসিস্টেন্ট কমিশনার ছিলেন , তার সরকারি কোয়ার্টার থেকে আমি পড়াশুনা করি। দুজনের কাউকে না বলে লুকিয়ে গিয়ে কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে হুগলিতে দেখা করলাম । কিন্তু আমরা জানতাম না যে ওর বাড়িতে পুলিশের ওয়াচ আছে । বাড়িতে ফিরে সব শুনে আমরা অবাক , কলকাতা পুলিশের কমিশনার জবরদস্ত টেগার্ট সাহেব আমাদের ওঁর নিকট উপস্থিত করার জন্য হুকুম দিয়েছেন।
পরের দিনই বকুনি দিতে দিতে সঙ্গে করে আমাদেরকে ওঁর অফিসে নিয়ে গেলেন ,ও বললেন যে এবার হতে উনি আমাদের উপর কড়া নজর রাখবেন। কিন্তু টেগার্ট সাহেব আমাদের সকলকে অবাক করে বললেন, নো নো দ্যাট ওন্ট সল্ভ দি প্রবলেম, পুট দেম ইন দি পুলিশ। ভ্রাতা হিরন্ময় I.C.S. পরীক্ষা দেবার অজুহাতে ওরই সাহয্যে ইয়ুরোপ-এ পাড়ি দিল। পরে সে ডক্টরেট ভাষাবিদ হয়ে পোল্যান্ডে ওয়ারস ইউনিভারসিটিতে স্লাভ ফাইলোলোজির প্রফেসর ও দেশ স্বাধীন হলে মস্কোতে ভারতীয় দূতাবাসের সে ফার্স্ট সেক্রেটারি হয়েছিল, কিন্তু সে যাই হোক তার ভাগ্য ছিল ভাল। কিন্তু আমি এতে পুলিশে ঢুকতে বাধ্য হলাম। কারণ ঐ যুগে অভিভাবকদের মতামতকে ঈশ্বরের আদেশ ভাবা হতো। পরের বছরেই আমাকে ওদের সিলেকশন বোর্ডে হাজির হতে হয়েছিল। ”এইভাবে কর্মজীবনে তিনি জড়িয়ে পড়লেন পুলিশের কাজে । পুলিশ ট্রেনিং-এর সময় গান্ধীজির স্বরাজ আন্দোলনের মুহুর্তগুলি কীভাবে তাঁর তরুণ মনকে নাড়া দিয়েছিল তার সুন্দর বর্ণনা পাই এই বইটিতে। তিনি লিখছেন—‘… ঐসময় গান্ধীজী কংগ্রেসে এসেছেন ও স্বাধীনতা আন্দোলন আরম্ভ করেছেন । ততদিনে চিত্তরঞ্জন দাশও এতে যোগ দিয়েছেন । স্কুলে পড়াকালে ওদের আহ্বানে একবার স্কুলও ছেড়েছিলাম। কিন্তু অভিভাবকদের থাপ্পর খেয়ে ফের স্কুলে ফিরে এসেছি, কিন্তু তবুও লুকিয়ে কতোদিন পার্কে গান্ধীজী ও চিত্তরঞ্জনের বক্তৃতা শুনতাম ও দেশাত্মবোধে উদবুদ্ধ হতাম ।…”
পঞ্চানন ঘোষাল বহু বই প্রণয়ন করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ৮ খণ্ডের অপরাধ বিজ্ঞান। চতুর্থ খণ্ডের এক জায়গায় তিনি লিখছেন, ”রাজনৈতিক অপরাধকে প্রকৃত বা বৈজ্ঞানিক অপরাধ বলা হয় না। কারণ এই অপরাধ স্বার্থপ্রণোদিত হয় এবং তার মধ্যে ব্যক্তিগত বা দলগত আদর্শ থাকে। রাজনৈতিক অপরাধীদের অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য থাকে সৎ এবং এজন্য তাঁরা প্রভূত স্বার্থত্যাগ এমন কি প্রয়োজনবোধে মৃত্যুবরণ করতেও দ্বিধাবোধ করে না। কিন্তু কেউ যদি ব্যক্তিগত বা দলগত স্বার্থ দ্বারা অনুপ্রেরিত হয়ে আদর্শহীনভাবে জনসাধারণকে ভুল পথে পরিচালিত করতে প্রয়াস পান তাঁদের ঐরূপ কার্যকে অপকার্যই বলা হবে। ”উল্লেখ্য এই বক্তব্যটি আজকের দিনেও ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক।
সাহিত্যকর্মের পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজসেবার কাজও করেছেন পঞ্চানন ঘোষাল। মাদরাল গ্রামে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন আবাসিক স্কুল, মডেল গার্লস স্কুল, লাইব্রেরি, মেডিকাল সেন্টার। কলকাতার রেড লাইট এলাকায় সেখানকার বাচ্চাদের জন্য স্কুলও প্রতিষ্ঠা করেন। স্থাপন করেন সংশোধনী স্কুল, কৃষি খামার কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। ক্রাইম মিউজিয়ামে দান করেন তাঁর ব্যক্তিগত সংগ্রহ সমূহ। তিনিই হলেন কলকাতা পুলিশ জার্নালের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। তাঁর লেখা বহু বইয়ের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য হল - রক্তনদীর ধারা। কুখ্যাত খোকা গুণ্ডার জীবন অনুসারী একটি চিত্তাকর্ষক কাহিনি গ্রন্থ এটি।
কলকাতার বড় বড় ডাকাত-গুন্ডা-বদমাইশরা পঞ্চানন ঘোষালকে চিনতেন ও ভয় পেতেন। বাংলা-বিহার-ওড়িশা-অসমের দুর্ধর্ষ দস্যুসর্দার খোকা গুন্ডাকে তখনও তিনি বাগে আনতে পারেননি। বহু দিন ধরে তাকে ধরার চেষ্টায় ছিলেন। হঠাৎ এক বার সিভিল ড্রেসে তিনি দেওঘর এলেন, একেবারে খোকা গুন্ডার মুখোমুখি!
পঞ্চানন ঝাঁপিয়ে পড়লেন তার ওপর। খোকা তক্ষুনি একটা ধারালো ছুরি বের করে পঞ্চাননের বুকে বসিয়ে দেওয়ার আগেই কয়েক জন লোক খোকার কোমর ধরে ঝুলে পড়ল। কিন্তু খোকা একটা বিকট হুংকার দিয়ে ধাঁই করে এক ঘুসি মারল পঞ্চাননের মুখে। ঠোঁট-মুখ ফেটে রক্তারক্তি অবস্থা। কিন্তু সেটাও তিনি গ্রাহ্য না করে পালটা ঘুসি মারলেন। কিছু ক্ষণ ধস্তাধস্তির পর, পঞ্চানন জিতলেন, খোকাকে হাজতে তুলে আনলেন।
বিচারে খোকা গুন্ডার ফাঁসির অর্ডার এল। স্নান করে, ফুলের মালা পরে, সেন্ট মেখে, ঘর থেকে বেরিয়ে খোকা দেখল, পঞ্চাননবাবু তার সঙ্গে দেখা করার জন্য অপেক্ষা করছেন।
খোকা গুন্ডা ছুটে এসে পঞ্চাননকে জড়িয়ে ধরল। পঞ্চানন বললেন, আমার বড় লজ্জা করছে, আপনার মতো বীরকে বাঁচিয়ে রাখতে পারলে হয়তো ভালই হত। খোকা বললেন, আপনার কাছে আমার একটা শেষ অনুরোধ আছে। শুনেছি, আপনি শুধু পুলিশ নন, এক জন ভাল লেখকও। পারবেন, আমার জীবন-ইতিহাস লিখতে? পঞ্চানন ঘোষাল বললেন, পারব। খোকা গুন্ডা তাঁর হাত দুটো ধরে বলল, মানুষ চোর-ডাকাতের গল্প পড়তে ভালবাসে, আমার ফাঁসির পরে আমি আপনার লেখার মধ্যে বেঁচে থাকতে চাই। এর পর ঘণ্টা বেজে উঠল।
পঞ্চানন ঘোষাল খুব শিগগির লিখে ফেললেন খোকা গুন্ডার জীবনের নানা কাহিনি। মাঝে মাঝে তাঁর নিজের জীবনের কিছু কাহিনিও এতে যোগ করেছেন। দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন চরিত্রের মানুষের জীবনকাহিনি একসঙ্গে লেখা হয়ে আছে ‘রক্তনদীর ধারা’ বইটিতে।
কৃতজ্ঞতা - প্রীতম সেনগুপ্ত ও পৃথা বল।
নীচে তার রচনার ওপর ক্লিক করলে নির্দিষ্ট বইটি পেতে পারেন।
অ - ঔ | ক - ন | প - ম, শ | স, ষ, র, ল, য, হ, ক্ষ |
---|---|---|---|
একটি আবেদন -
কেউ যদি কোনো বই/ পত্রিকা স্ক্যান করতে / দিতে চান
বা সূচীপত্র ও.সি.আর. করতে চান -
তাহলে নিচের ইমেলে যোগাযোগ করবেন
কেউ যদি কোনো বই/ পত্রিকা স্ক্যান করতে / দিতে চান
বা সূচীপত্র ও.সি.আর. করতে চান -
তাহলে নিচের ইমেলে যোগাযোগ করবেন
babuipakhi819@gmail.com
No comments:
Post a Comment