বাংলা ভাষার সমস্ত লেখক - এক জায়গায় ক্রমানুসারে
সমরেশ বসু
সমরেশ বসু
জন্ম - ১১ই ডিসেম্বর, ১৯২৪ মৃত্যু - ১২ই মার্চ, ১৯৮৮
ঢাকা, বাংলাদেশ কলকাতা, ভারত
ছদ্মনাম ঃ কালকূট, ভ্রমর।
(যদিও সমরেশ বসু নামটিও আসল নয়। এটি দিয়েছেন তার বন্ধু দেবশঙ্কর মুখোপাধ্যায়। আসল নাম সুরথনাথ বসু।)
বিশেষ চরিত্র ঃ কিশোর গোয়েন্দা গোগোল, গোয়েন্দা অশোক ঠাকুর।
বিশেষ চরিত্র ঃ কিশোর গোয়েন্দা গোগোল, গোয়েন্দা অশোক ঠাকুর।
বাংলা সাহিত্যাকাশে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন সমরেশ বসু । কয়েক দশক ধরে বাংলা সাহিত্যের আঙিনায় অবাধে বিচরন করেছেন সমরেশ বসু । সমরেশ বসু ছিলেন প্রতিভাবান কথাসাহিত্যিক ও পত্রিকা-সম্পাদক । এই প্রতিভাবান কথাসাহিত্যিক 1924 সালে ডিসেম্বর মাসের 11 তারিখে অধুনা বাংলাদেশের অন্তর্গত ঢাকা জেলার রাজানগর গ্রামে ভুমিষ্ঠ হন । এই প্রতিভাবান কথাসাহিত্যিকের পিতার নাম মোহিনী মোহন বসু ইনি পেশায় ছিলেন প্রতিকৃতি-অঙ্কনশিল্পী এবং মাতার নাম শৈবলিণী বসু। এই প্রতিভাবান কথাসাহিত্যিকের পিতৃদত্ত নাম ছিল সুরথনাথ ।
এই প্রতিভাবান কথাসাহিত্যিকের শৈশবকাল ঢাকা জেলার বিক্রমপুরে অতিবাহিত হয় এবং কৈশোর কাটে বর্তমান ভারতবর্ষের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের অন্তর্গত কলকাতার উপকণ্ঠে অবস্থিত নৈহাটিতে । এই খ্যাতনামা কথাসাহিত্যিক ঢাকা জেলার গ্রাজুয়েট স্কুলে কিছুদিন বিদ্যাশিক্ষা করার পর নৈহাটির মহেন্দ্র স্কুলে ভর্তি হন এবং অষ্টম শ্রেনীর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পেরে 1939 সালে স্কুল ত্যাগ করেন । অসহনীয় দারিদ্রের মধ্যে জীবন কাটে এই খ্যাতনামা কথাসাহিত্যিকের । এই খ্যাতনামা কথাসাহিত্যিক একসময় ডিম , মুরগী ও তরিতরকারী বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন । এই খ্যাতনামা কথাসাহিত্যিক নিজের চেয়ে চার বছরের বড়ো মহিলাকে বাড়ির অমতে বিবাহ করে হঠাৎ করে নিরুদ্দেশ হয়ে একটা শ্রমিক বস্তিতে গিয়ে ওঠেন । সেইসময় কমিউনিস্ট পার্টির নেতা জগদ্দলের সত্যভূষন দাশগুপ্তের ( সত্য মাস্টার ) সাথে এই কথাসাহিত্যিকের পরিচয় হয় এবং তার প্রভাবে কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করে পাটশিল্প শ্রমিক আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করেন এই খ্যাতনামা কথাসাহিত্যিক । মূলত এই শ্রমিক নেতারই চেষ্টায় 1943 সালে ইছাপুর রাইফেল কারখানায় চাকরি পান এই খ্যাতনামা কথাসাহিত্যিক । 1943 থেকে 1949 সাল পর্যন্ত এই রাইফেল কারখানায় পাঁচ সিকে রোজে চাকরি করতেন এই কথাসাহিত্যিক । 1948 সালে দেশে কমিউনিস্ট পার্টি বেআইনি ঘোষিত হয় এবং কমিউনিস্ট পার্টির সক্রিয় সদস্য হওয়ার জন্য 1949 সালে কারারুদ্ধ হন এই শ্রদ্ধেয় কথাসাহিত্যিক । এক বছর কারারুদ্ধ থাকার পর জেল থেকে বাহির হয়ে এই শ্রদ্ধেয় কথাসাহিত্যিক কমিউনিস্ট পার্টি ত্যাগ করেন এবং সম্পুর্ণভাবে সাহিত্যচর্চায় আত্মনিয়োগ করেন। 1946 সালে "পরিচয়" পত্রিকার শারদীয়া সংখ্যায় এই শ্রদ্ধেয় কথাসাহিত্যিকের রচিত প্রথম গল্প "আদাব" প্রকাশিত হলে পাঠকমহলে আলোড়ন সৃষ্টি হয় । সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উপর রচিত তার এই গল্পটি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সেরা গল্প হিসাবে বিবেচিত হয় । এই শ্রদ্ধেয় কথাসাহিত্যিকের রচিত প্রথম উপন্যাসের নাম "নয়নপুরের মাটি" । এই উপন্যাসটি প্রকাশের জন্য প্রকাশক খুঁজে পেতে এই কথাসাহিত্যিককে অনেক হয়রানি ও অপমান সহ্য করতে হয় । এই কথাসাহিত্যিকের প্রথম পুস্তকাকারে প্রকাশিত উপন্যাস হল "উত্তরঙ্গ" । এই উপন্যাসটি জেলে থাকাকালীন রচনা করেন এই শ্রদ্ধেয় কথাসাহিত্যিক । এই শ্রদ্ধেয় কথাসাহিত্যিক তার জীবনের অভিজ্ঞতা ও পারিপার্শ্বিক ঘটনা নিয়ে নিজ নামে এবং "কালকুট" ছদ্মনামে 200টি ছোটগল্প এবং 100টি উপন্যাস রচনা করেছেন, তার অনেকগুলিই কালজয়ী । এই কালজয়ী কথাসাহিত্যিক রচিত উল্লেখযোগ্য ছোটগল্প ও উপন্যাস সমুহ :- নয়নপুরের মাটি, উত্তরঙ্গ, গঙ্গা, বিবর, প্রজাপতি, দেখি নাই ফিরে, সওদাগর, কোথায় পাবো তারে, বাঘিনী, পাতক, চলো মন রূপনগরে, বিটি রোডের ধারে, শ্রীমতী কাফে, শাম্ব, উড়ন্ত চড়াই, মহাকালের রথের ঘোড়া, জগদ্দল, টানাপোড়েন, যুগ যুগ জিয়ো, অমৃত কুম্ভের সন্ধানে, অমৃত বিষের পাত্র, নির্জন সৈকতে ,হারায়ে সেই মানুষ , মুক্তবেণীর উজানে , রক্তিম বসন্ত প্রভৃতি । তান্ত্রিক মতবাদের উপর ভিত্তি করে এই কালজয়ী কথাসাহিত্যিক "অমাবস্যায় চাঁদের উদয়" নামে একটি পুস্তক রচনা করেছেন । এই কালজয়ী কথাসাহিত্যিক তার রচিত বিবর, প্রজাপতি ও পাতক উপন্যাসে খোলাখুলিভাবে যৌনতার ভাষা ব্যবহার করার দরুন পাঠসমাজে প্রবলভাবে সমালোচিত হন । এই মহান কথাসাহিত্যিক গোয়েন্দা সিরিজ "গোগোল অমনিবাস" রচনা করেন এবং কিছুদিন "মহানগর" পত্রিকা সম্পাদনাও করেছেন । শিল্পী ভাস্কর রামকিঙ্কর বেইজের জীবনী নিয়ে "দেশ" পত্রিকায় এই মহান কথাসাহিত্যিক তার ধারাবাহিক রচনা "দেখি নাই ফিরে" মৃত্যুর কারনে শেষ করে যেতে পারেন নি । এই মহান কথাসাহিত্যিক ছবি আঁকা, বাঁশি বাজানো এবং অভিনয়ে অতিশয় পারদর্শী ছিলেন । এই মহান কথাসাহিত্যিক "গঙ্গা" উপন্যাস রচনা করার জন্য 1955 সালে "আনন্দ পুরস্কার" এবং "শাম্ব" উপন্যাস রচনা করার জন্য 1980 সালে "সাহিত্য অকাদেমী পুরস্কার" লাভ করেন।
এই মহামান্য কথাসাহিত্যিকের 1988 সালের মার্চ মাসের 12 তারিখে কলকাতাতেই তিরোধান হয় । এই মহামান্য কথাসাহিত্যিকের রচিত ছোটগল্প ও উপন্যাসগুলি বাংলা সাহিত্যের একটি অমূল্য সম্পদ ভান্ডার ।
সমরেশ বসুর জগদ্দল বইটির পিডিএফ চাই
ReplyDelete