বিশেষ ঘোষণা

বিশেষ ঘোষণাঃ কারিগরি কারণ বশতঃ বেশ কিছু বইয়ের লিঙ্ক কাজ করছে না। সেগুলো ধীরে ধীরে ঠিক করে দেওয়ার কাজ চলছে। কিছু বই অপেক্ষাকৃত ভালো করতে গিয়ে একটু সময় লাগছে। ফেসবুক গ্রুপে প্রত্যেক আপডেট জানিয়ে দেওয়া হবে। মাঝে মাঝে নতুন বই দেবার ও চেষ্ট চলছে ।

সুভাষ মুখোপাধ্যায়

বাংলা ভাষার সমস্ত লেখক - এক জায়গায় ক্রমানুসারে

সুভাষ মুখোপাধ্যায়


জন্ম - ১২ই ফেব্রুয়ারী, ১৯১৯                                                                  মৃত্যু - ৮ই জুলাই, ২০০৩
কৃষ্ণনগর, নদীয়া, প.বঙ্গ, ভারত                                                                              কলকাতা, ভারত


"মিছিলে দেখেছিলাম একটি মুখ,
মুষ্টিবদ্ধ একটি শানিত হাত
আকাশের দিকে নিক্ষিপ্ত;

বিস্রস্ত কয়েকটি কেশাগ্র

আগুনের শিখার মতো হাওয়ায় কম্পমান ।
ময়দানে মিশে গেলেও
ঝঞ্ঝাক্ষুদ্ধ জনসমুদ্রের ফেনিল চুড়ায়
ফসফরাসের মতো জ্বলজ্বল করতে থাকল
মিছিলের সেই মুখ ।
সভা ভেঙে গেলো , ছত্রাকারে ছড়িয়ে পড়ল ভিড় 
আর মাটির দিকে নামানো হাতের অরণ্যে
পায়ে পায়ে হারিয়ে গেল মিছিলের সেই মুখ ।
আজও দুবেলা পথে ঘুরি
ভিড় দেখলে দাঁড়াই
যদি কোথাও খুঁজে পাই মিছিলের সেই মুখ ।"

বিংশ শতাব্দীতে বামপন্থী ঘরানার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি হলেন সুভাষ মুখোপাধ্যায় । সুভাষ মুখোপাধ্যায়ই সর্বপ্রথম কবি যিনি বাংলা কবিতার মধ্যে রাজনীতির প্রবেশ করিয়েছিলেন ।সুভাষ মুখোপাধ্যায় মার্কসবাদী চিন্তাধারায় ভীষনভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন বলেই তিনি তার কবিতার বিষয়বস্তু হিসাবে রাজনৈতিক মিছিল ও আন্দোলনকে নির্বাচিত করেছিলেন । রাজনৈতিক মিছিল ও আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের রচিত কবিতাগুলি সেইসময় খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল এবং কবিতার অনেক লাইন পরবর্তীকালে প্রবাদে পরিনত হয়েছিল , যেমন - "প্রিয় ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য এসে গেছে ধ্বংসের বার্তা" বা "ফুল ফুটুক না ফুটুক / আজ বসন্ত "কিংবা" জাপ-পুষ্পকে ঝরে ফুলঝুরি, জ্বলে ওঠে হ্যাঙ্কাও" প্রভৃতি । সুভাষ মুখোপাধ্যায় বৈপ্লবিক ভাবধারায় কবিতা রচনা করেছিলেন বলেই বাংলার পাঠককূলের কাছে তিনি "বিপ্লবী" কবি হিসাবে সুপরিচিত হয়েছিলেন । সমাজের তৃণমূল স্তরে নেমে গিয়ে সমাজকে কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করে কাব্য রচনায় ব্রতী হতেন সুভাষ মুখোপাধ্যায় । সুভাষ মুখোপাধ্যায় ছিলেন কবি, সাহিত্যিক, অনুবাদক, সাংবাদিক এবং পত্রিকা-সম্পাদক । উপরোক্ত লাইনগুলি এই বিপ্লবী কবি রচিত 1948 সালে প্রকাশিত "অগ্নিকোন" কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত "মিছিলের মুখ" নামক কবিতা থেকে উদ্ধৃত করা হয়েছে। 

এই বিপ্লবী কবি 1919 সালের ফেব্রুয়ারি মাসের 12 তারিখে বর্তমান ভারতবর্ষের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের অন্তর্গত নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে মাতুলালয়ে ভুমিষ্ঠ হন । এই বিপ্লবী কবির পিতার নাম ক্ষিতীশ চন্দ্র মুখোপাধ্যায় , ইনি পেশায় সরকারি আবগারি বিভাগের কর্মচারী এবং মাতার নাম যামিনী দেবী । অধুনা বাংলাদেশের কুষ্ঠিয়া জেলার অন্তর্গত লোকনাথপুরে এই বিপ্লবী কবির আদি নিবাস ছিল । পিতার বদলির চাকুরি জন্য এই শ্রদ্ধেয় কবির শৈশব ও কৈশোর দেশের বিভিন্ন স্থানে অতিবাহিত হয় । এই শ্রদ্ধেয় কবি তিন-চার বছর বয়সে কলকাতার 50, নেবুতলা লেনে ভাড়াবাড়ির দোতলায় যৌথ পরিবারে থাকতেন । পরে এই শ্রদ্ধেয় কবির কৈশোর অধুনা বাংলাদেশের রাজশাহি মহকুমা শহর নওগাঁয় অতিবাহিত হয় । এই শ্রদ্ধেয় কবি নওগাঁর স্কুলে ভর্তি হয়ে বিদ্যাশিক্ষা আরম্ভ করেন । 1930 সালে সমগ্র বিশ্বে অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটলে এই শ্রদ্ধেয় কবির পরিবার ভয়াবহ দারিদ্রের সম্মুখীন হন তখন কবি কলকাতায় চলে আসেন । এই বরণীয় কবি 1937 সালে কলকাতা শহরের অন্তর্গত ভবানীপুর মিত্র ইনস্টিটিউশন থেকে ম্যাট্রিক, 1939 সালে আশুতোষ কলেজ থেকে আই. এ. এবং 1941 সালে স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে দর্শনশাস্ত্রে অনার্সসহ বি.এ. পাশ করেন ।এই বরণীয় কবি ম্যাট্রিক পাশ করার সঙ্গে সঙ্গে সহপাঠী সমর সেনের কাছে মার্কসবাদে দীক্ষিত হয়ে লেবার পার্টিতে যোগদান করেন । পরে এই বরণীয় কবি ছাত্রনেতা বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায়ের প্ররোচনামূলক মন্তব্যে ব্যথিত হয়ে লেবার পার্টি ত্যাগ করে কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করেন । 1942 সালে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন এই বরণীয় কবি । এই সময় সদ্যগঠিত ফ্যাসিবিরোধী লেখক ও শিল্পী সংঘের সাংগঠনিক কমিটিতে কবি বিষ্ণু দে-র সাথে যুগ্মভাবে সম্পাদক নিযুক্ত হন এই বরণীয় কবি । এই সময় মাত্র 15 টাকা ভাতায় পার্টির নিজস্ব পত্রিকা "জনযুদ্ধ" - এ সর্বক্ষনের কর্মী হিসাবে যোগদান করেন এই খ্যাতনামা কবি । এই খ্যাতনামা কবি 1946 সালে দৈনিক "স্বাধীনতা" পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেছেন । 1948 সালে দেশে কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ ঘোষনা হলে এই খ্যাতনামা কবিকে দুইবার কারাবরণ করতে হয় । 1950 সালে কারাবাস থেকে মুক্তি লাভ করেন এই খ্যাতনামা কবি । মুক্তি পাওয়ার পর এই খ্যাতনামা কবির জীবনে প্রচন্ড অর্থকষ্ট দেখা দিলে তিনি মাত্র 75 টাকা বেতনে একটি নতুন প্রকাশনা সংস্থায় সাব-এডিটর পদে যোগদান করেন । জীবনে একবারই চাকুরি তাও এক বছর পর সেই চাকুরি ছেড়ে দিয়ে "পরিচয়" পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহন করেন এই স্বনামধন্য কবি । 

"পরিচয়" পত্রিকা সম্পাদনার পাশাপাশি এই স্বনামধন্য কবি "সপ্তাহ", "লোটাস" এবং 1961 সাল থেকে 1963 সাল পর্যন্ত সত্যজিৎ রায়ের সাথে "সন্দেশ" পত্রিকা সম্পাদনাও করেছেন । সত্তরের দশক থেকে এই প্রথিতযশা কবির রাজনৈতিক চিন্তাধারার পরিবর্তন হতে আরম্ভ করলে কবি 1981 সালে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ ত্যাগ করে রাজনীতি থেকে সরে আসেন । এইভাবে রাজনৈতিক ক্ষেত্র থেকে এই প্রথিতযশা কবি নিজেকে সরিয়ে নিয়ে ছিলেন বলে কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃবর্গ তাকে সমালোচনায় বিদ্ধ করে । মৃত্যুর আগে পর্যন্ত এই সমালোচনা থেকে কবি কোনদিনই মুক্তি লাভ করেন নি । বি. এ. পাঠক্রমে পাঠরতা থাকাকালীন এই প্রথিতযশা কবি কবিতা রচনার মধ্য দিয়ে বাংলার সাহিত্যে আঙিনায় প্রবেশ করেন । 1940 সালে প্রকাশিত হয় এই প্রথিতযশা কবির রচিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ "পদাতিক" যা বাংলার পাঠকমহলে বিপুল জনপ্রিয় হয় এবং কবিকে সাহিত্যজগতে সুপ্রতিষ্ঠিত করে । এই প্রথিতযশা কবির রচিত "পদাতিক" কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত মে দিনের কবিতাটি শ্রমিকশ্রেণির বিজয়কাব্য হিসাবে পরিচিতি লাভ করে । "পদাতিক" ছাড়াও এই জনপ্রিয় কবির রচিত উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলি হল -- অগ্নিকোন (1948), চিরকুট (1950), ফুল ফুটুক (1957), যত দূরেই যাই (1962), কাল মধুমাস (1966), এই ভাই (1971), ছেলে গেছে বনে (1972), একটু পা চালিয়ে ভাই (1979), জল সইতে (1981) প্রভৃতি । কবিতা ছাড়াও এই জনপ্রিয় কবি ছড়া, রিপোর্টাজ ও ভ্রমণসাহিত্য, গদ্যরচনা , অর্থনীতিমূলক রচনা, বিদেশী গ্রন্থের অনুবাদ, জীবনী, উপন্যাস, শিশু ও কিশোরসাহিত্য সকল প্রকার রচনাতে খুবই দক্ষ ছিলেন । ছোটদের জন্য এই জনপ্রিয় কবি "মিউ-এর জন্য ছড়ানো ছিটানো", "এলেম আমি কোথা থেকে" প্রভৃতি ছড়া এবং অনুবাদ করেন নাজিম হিকমতের কবিতা , হাফেজের কবিতা , পাবলো নেরুদার কবিতা, চর্যাপদ, গাথা সপ্তসতী, অমরুশতক প্রভৃতি । 

এই জনপ্রিয় কবি হাংরাস, অন্তরীপ, হ্যানসেনের অসুখ, ঢোলগোবিন্দের আত্মদর্শন প্রভৃতি গদ্য; চিঠি জুড়ে জুড়ে "চিঠির দর্পণে" এর মতো প্রথাভাঙা উপন্যাস; কাল মার্কস রচিত ওয়েজ লেবার অ্যান্ড ক্যাপিটাল অবলম্বনে "ভূতের বেগার" এর মতো অর্থনীতিমূলক গ্রন্থ ; জীবনী বিষয়ক গ্রন্থ জগদীশচন্দ্র (1978), নীহাররঞ্জন রায় রচিত "বাঙালির ইতিহাস" গ্রন্থের কিশোর সংস্করণ (1952) , অক্ষরে অক্ষরে আদি পর্ব (1954) , কথার কথা (1955), দেশবিদেশের রূপকথা (1955), বাংলা সাহিত্যের একাল সেকাল (1967) প্রভৃতি শিশু ও কিশোর সাহিত্য রচনাতে প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন । এই জনপ্রিয় কবি 1945 সালে হিরণকুমার সান্যালের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বিশিষ্ট বাঙালির সাহিত্যিকদের জবানবন্দী অবলম্বনে রচিত গ্রন্থ "কেন লিখি" এবং 1955 সালে গোলাম কুদ্দুসের সঙ্গে যৌথভাবে রচিত ফ্যাসিবিরোধী কবিতা সংকলন "একসুর" সম্পাদনাও করেছেন । এই জনপ্রিয় কবি ভ্রমণ করতে খুব ভালোবাসতেন বলে সেই সকল ভ্রমণের অভিজ্ঞতাকে মূলধন করে কিছু ভ্রমণকাহিনীও রচনা করেছেন, তার মধ্যে - আমার বাংলা (1951), যেখানে যখন (1960), ডাকবাংলার ডায়েরী (1965) , নারদের ডায়েরী (1969), যেতে যেতে দেখা (1969), ভিয়েতনামে কিছুদিন (1974) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য । এই মহামান্য কবি তার কবিতার মধ্যে প্রেম , সংগ্রাম , প্রকৃতি , সামাজিক অনাচার, জীবনের আশা ও ব্যর্থতা সরল ভাষায় নতুন রূপে সুন্দরভাবে চিত্রায়িত করেছেন । এই মহামান্য কবি নিজের সাহিত্যকীর্তির জন্য 1964 সালে "সাহিত্য অকাদেমি" পুরস্কার, 1977 সালে আফ্রো-এশিয়ান রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশনের "লোটাস" পুরস্কার, 1984 সালে যথাক্রমে "আনন্দ" পুরস্কার এবং "সোভিয়েত ল্যান্ড নেহেরু" পুরস্কার 1992 সালে "জ্ঞানপীঠ" পুরস্কার লাভ করেন । এই মহামান্য কবি 1996 সালে ভারতের সর্বোচ্চ সাহিত্য সম্মান "সাহিত্য একাডেমী ফেলোশিপ" এবং বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে সর্বোচ্চ সম্মান "দেশিকোত্তম" লাভ করেন । 

2003 সালে জুলাই মাসের 8 তারিখে এই প্রবাদপ্রতিম কবির তিরোধান হয় । বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এই প্রবাদপ্রতিম কবির পর্বততুল্য অবদান কোনভাবেই অস্বীকার করা যায় না ।

কৃতজ্ঞতা - Shining Subir.

নীচে তার রচনার ওপর ক্লিক করলে নির্দিষ্ট বইটি পেতে পারেন।

অ - ঔ ক - ন প - ম, শ স, ষ, র, ল, য, হ, ক্ষ

















































































































একটি আবেদন - 
কেউ যদি কোনো বই/ পত্রিকা স্ক্যান করতে / দিতে চান 
বা সূচীপত্র ও.সি.আর. করতে চান - 
তাহলে নিচের ইমেলে যোগাযোগ করবেন 

babuipakhi819@gmail.com 

4 comments:

  1. কবিতার বোঝাপড়া, সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের লেখা বইটি পাওয়া যাবে?

    ReplyDelete
  2. সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতার বোঝাপড়া বইটি কি পাওয়া যাবে?

    ReplyDelete
  3. চর্যাপদ বই টি পাওয়া যাবে? সুভাষ মুখোপাধ্যায় অনুবাদ।

    ReplyDelete