বাংলা ভাষার সমস্ত লেখক - এক জায়গায় ক্রমানুসারে
প্রেমেন্দ্র মিত্র
জন্ম - ২৪শে মে, ১৯০৪ মৃত্যু - ৩রা ্মে, ১৯৮৮
বারানসি, উত্তরপ্রদেশ, ভারত কলকাতা, ভারত
প্রেমেন্দ্র মিত্র
জন্ম - ২৪শে মে, ১৯০৪ মৃত্যু - ৩রা ্মে, ১৯৮৮
বারানসি, উত্তরপ্রদেশ, ভারত কলকাতা, ভারত
ছদ্মনাম ঃ কৃত্তিবাস ভদ্র।
বিখ্যাত চরিত্র ঃ ঘনাদা, পরাশর বর্মা, মেজ কর্তা।
বিখ্যাত চরিত্র ঃ ঘনাদা, পরাশর বর্মা, মেজ কর্তা।
প্রেমেন্দ্র মিত্র, (১৯০৪-১৯৮৮) একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, সাংবাদিক, সম্পাদক। জন্ম ১৯০৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কাশিতে। পৈতৃক নিবাস দক্ষিণ চবিবশ পরগণার বৈকুণ্ঠপুরে। পিতা জ্ঞানেন্দ্রনাথ মিত্র ভারতীয় রেলওয়াতে চাকরি করতেন। মাতার নাম সুহাসিনী দেবী।
প্রেমেন্দ্র মিত্র কলকাতার সাউথ সাবার্বন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক (১৯২০) পাস করে সাহিত্য-সাধনায় মনোযোগী হয়ে ওঠেন। ১৯২৩ সালে প্রবাসীতে ‘শুধু কেরাণী’ ও ‘গোপন চারিণী’ নামে দুটি গল্প প্রকাশিত হয় এবং গল্প দুটি নিয়ে কল্লোল পত্রিকা গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করে। ফলে সাহিত্য অঙ্গনে তাঁর খ্যাতি বেড়ে যায়। সাহিত্য-সাধনার প্রথমপর্বে তিনি ‘কৃত্তিবাস ভদ্র’ ছদ্মনামে লিখতেন।
প্রেমেন্দ্র মিত্র কল্লোল (১৯২৩) পত্রিকার একজন নিয়মিত লেখক ছিলেন। পরে মুরলীধর বসুর সহযোগিতায় কালিকলম (১৯২৬) পত্রিকা সম্পাদনা করেন। তিনি রবীন্দ্রনাথের উত্তরাধিকারকে নিজের লেখায় সাঙ্গীকরণের মাধ্যমে গ্রহণ করেন। আন্তর্জাতিক মতবাদকে সমীহ করলেও সেসব তিনি নির্বিচারে গ্রহণ করেননি। সেসব মতবাদ তিনি গ্রহণ করেছেন স্বদেশের পরিপ্রেক্ষিতে, গরিব ও শ্রমজীবী সমাজের প্রতি সহমর্মিতার মাধ্যমে। তিনি একটি কবিতায় বলেন: ‘আমি কবি যত কামারের আর কাঁসারির আর ছুতোরের, মুটে মজুরের,/ আমি কবি যত ইতরের!’ রবীন্দ্রবলয়ের বাইরে সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত, কাজী নজরুল ইসলাম কাব্যজগতে যে ধারার সূচনা করেছিলেন প্রথম জীবনে তার দ্বারা প্রভাবিত হলেও পরে তিনি তাঁর নিজের স্বতন্ত্র পথ খুঁজে পান।
তাঁর রচিত উপন্যাসে বাস্তবতার রূপায়ণ আছে। মৃদু ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ পরিবেশন এবং কপটতার বিরুদ্ধে কষাঘাত তাঁর গল্পের বৈশিষ্ট্য। এ কারণে তাঁর গল্প প্রথাগতভাবে কল্লোল-এর গল্প থেকে স্বতন্ত্র। সহযাত্রীদের মধ্যে তিনি সর্বাধিক অন্তর্গূঢ় ও বলিষ্ঠ লেখক। নগর জীবনের ধোঁয়াশা, অব্যাহত ব্যর্থতা, অভিমানের পরাভব, জীবনের বিশেষ অনিবার্যতাকে তিনি অনুভব করেছিলেন এবং তা গল্পে রূপদান করে গেছেন। নিজের পেশার বৈচিত্র্যের মতো তাঁর লেখাতেও বৈচিত্র্য ছিল।
কবিতা, উপন্যাস, গল্প ছাড়াও তিনি সৃজনশীল প্রবন্ধ, গান, চিত্রনাট্য, রম্যরচনা এবং গোয়েন্দা কাহিনিও লিখেছেন। হাস্যকৌতুকের ধারায় তাঁর অমর সৃষ্টি ‘পরাশর বর্ম’। বাংলা শিশুসাহিত্যে তাঁর অতুলনীয় সৃষ্টি ‘ঘনাদা’। শিশুর মনোরাজ্যের রোমাঞ্চকর অনুভূতিগুলি তিনি ঘনাদা চরিত্রের মাধ্যমে অভিব্যক্ত করেন। ঘনাদা পড়ে প্রতিটি শিশু-কিশোর ঘনাদার ভিতর দিয়ে নিজেদের দেখতে উন্মুখ হয়ে ওঠে। প্রেমেন্দ্র মিত্রের এ ঘনাদা সৃষ্টি হয় প্রথম ‘মশা’ (১৯৩৭) গল্পের মাধ্যমে। কিশোর মনোরাজ্য অধিকারের জন্য ডিটেকটিভ ও রোমাঞ্চকর কাহিনি সৃজনে তিনি অসাধারণ শক্তির পরিচয় দেন। অপরদিকে তিনি বিজ্ঞানভিত্তিক কিশোর উপন্যাস কুহকের দেশে লিখে বাংলা ভাষায় এ ধারার সার্থকতা প্রতিষ্ঠা করেন। একদিকে গোয়েন্দা পরাশর বর্মা, অন্যদিকে ভূত শিকারী মেজকর্তাকে নিয়ে অসাধরন সব রচনা সৃষ্টি করেছেন। ঘনাদার চোখে মহাভারতের এক অন্য ব্যাখ্যা তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু শেষ করতে পারেন নি। বহুদিন কিশোর পত্রিকা পক্ষিরাজের সম্পাদক ছিলেন।
প্রেমেন্দ্র মিত্র সাহিত্য সৃষ্টির ক্ষেত্রে যৌথভাবে রচনা করেন বিসর্পিল ও বনশ্রী নামে দুটি উপন্যাস। অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত ও বুদ্ধদেব বসু তাঁর এ সৃষ্টিকর্মের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। উপন্যাস দুটি প্রকাশিত হয় ১৯৩৪ সালে।
প্রেমেন্দ্র মিত্র সৃষ্ট জনপ্রিয়তম চরিত্র ঘনাদা, গল্পবাগীশ সর্বজ্ঞানী মেসবাড়ির ঘনশ্যাম দাস আজো সব বয়েসের পাঠকদের কাছে প্রিয়। তাঁর এই অমর চরিত্র ৭২ নং বনমালী নস্কর লেনের মেসবাড়ির বাসিন্দা ঘনাদা প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৪৫ সালে[৩]। এছাড়াও তিনি অনেকগুলি ছোট গোয়েন্দা গল্প ও উপন্যাস লিখেছেন যার মুখ্য চরিত্র পরাশর বর্মা, যে পেশায় গোয়েন্দা হলেও নেশায় কবি। তার সৃষ্ট চরিত্র মামাবাবু কে তিনি বহু এডভেঞ্চার উপন্যাস ও ছোটগল্পে এনেছেন যেগুলি কিশোরদের ভেতর জনপ্রিয় ছিল।
প্রেমেন্দ্র মিত্র প্রথম বাঙালি সাহিত্যিক যিনি নিয়মিত কল্পবিজ্ঞান বা বিজ্ঞান-ভিত্তিক গল্প-উপন্যাস রচনায় মনোনিবেশ করেন। তার বিজ্ঞান সাহিত্য রচনার শুরু ১৯৩০ সালে। রামধনু পত্রিকায় ক্ষিতীন্দ্রনারায়ন ভট্টাচার্য তাকে ছোটদের জন্যে লিখতে অনুরোধ করলে 'পিঁপড়ে পুরান' কাহিনীটি লেখেন। এটিই তার প্রথম কল্পবিজ্ঞান রচনা[২]। কুহকের দেশে গল্পে তার কল্পবিজ্ঞান ও এডভেঞ্চার কাহিনীর নায়ক মামাবাবুর আত্মপ্রকাশ। ১৯৪৮ সালে ড্রাগনের নিশ্বাস বের হলে মামাবাবু পাঠক aমহলে জনপ্রিয় হন। তাঁর রচিত কয়েকটি বিখ্যাত কল্পবিজ্ঞান গল্প ও উপন্যাসের নাম নিচে দেওয়া হল:
- ছোটোগল্প: "কালাপানির অতলে", "দুঃস্বপ্নের দ্বীপ", "যুদ্ধ কেন থামল", "মানুষের প্রতিদ্বন্দ্বী", "হিমালয়ের চূড়ায়", "আকাশের আতঙ্ক", "অবিশ্বাস্য", "লাইট হাউসে", "পৃথিবীর শত্রু", "মহাকাশের অতিথি", "শমনের রং সাদা"।
- বড়ো গল্প ও উপন্যাস: পিঁপড়ে পুরাণ, পাতালে পাঁচ বছর, ময়দানবের দ্বীপ, শুক্রে যারা গিয়েছিল, মনুদ্বাদশ, সূর্য যেখানে নীল।
এছাড়া আকাশবাণীর উদ্যোগে লিখিত "সবুজ মানুষ" নামে একটি চার অধ্যায়ের বারোয়ারি কল্পবিজ্ঞান কাহিনির প্রথম অধ্যায় রচনা করেন প্রেমেন্দ্র মিত্র। অবশিষ্ট তিনটি অধ্যায় লিখেছিলেন অদ্রীশ বর্ধন, দিলীপ রায়চৌধুরী ও সত্যজিৎ রায়।
পথ বেঁধে দিল, রাজলক্ষ্মী (হিন্দি), নতুন খবর, চুপি চুপি আসে, কালোছায়া, কুয়াশা, হানাবাড়ী, তাঁর পরিচালিত ছবি। এছাড়াও তিনি বহু সিনেমার কাহিনীকার, চিত্রনাট্যকার ও উপদেষ্টা ছিলেন।
সাহিত্য-সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য প্রেমেন্দ্র মিত্র শরৎ স্মৃতি পুরস্কার (১৯৫৪), আকাদেমি পুরস্কার (১৯৫৬), আনন্দ পুরস্কার (১৯৭৩), নেহেরু পুরস্কার (১৯৭৬) পুরস্কার লাভ করেন। এ ছাড়া শিশু সাহিত্য পরিষদের ভুবনেশ্বরী পদক (১৩৭৮), দেশিকোত্তম উপাধি, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের হরনাথ ঘোষ পদক (১৯৮১) প্রভৃতি সম্মাননা ও উপাধিতে তাঁকে সম্মানিত করা হয়। তাঁর মৃত্যু কলকাতায়, ৩ মে ১৯৮৮।
Hattamalar deshe boiti download kora jache na
ReplyDelete