বিশেষ ঘোষণা

বিশেষ ঘোষণাঃ কারিগরি কারণ বশতঃ বেশ কিছু বইয়ের লিঙ্ক কাজ করছে না। সেগুলো ধীরে ধীরে ঠিক করে দেওয়ার কাজ চলছে। কিছু বই অপেক্ষাকৃত ভালো করতে গিয়ে একটু সময় লাগছে। ফেসবুক গ্রুপে প্রত্যেক আপডেট জানিয়ে দেওয়া হবে। মাঝে মাঝে নতুন বই দেবার ও চেষ্ট চলছে ।

সুধীন্দ্র নাথ রাহা

বাংলা ভাষার সমস্ত লেখক - এক জায়গায় ক্রমানুসারে

সুধীন্দ্র নাথ রাহা
জন্ম - ২৩শে জানুয়ারি, ১৮৯৬                                                           - ১৮ই ফেব্রুয়ারী, ১৯৮৬
খূলণা, বাংলাদেশ                                                                                                       কলকাতা, ভারত

ছদ্মনাম ঃ সব্যসাচী, শ্রী বৈজ্ঞানিক, দিবাকর শর্মা, অলক ঘোষ, যশোধর মিত্র।


অধুনা বাংলাদেশের খুলনার ‘নলদা’ গ্রামে ১৮৯৬ সালের ২৩ জানুয়ারী যদুনাথ রাহার ঘরে মৃন্ময়ীদেবীর কোলে যে অতিথি এলো তাঁর নাম হোল সাহিত্যিক  সুধীন্দ্রনাথ রাহা ।

সাহিত্যের অনুরাগটা অল্প বয়স থেকেই ছিল, মাত্র ১৭ বছর বয়সের চলে আসেন পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহারে, তখন অবশ্য এ পাড় ও পাড় বলে কিছু ছিলনা, সবটাই ছিল বাংলা। পড়াশুনা শুরু করলেন ভিক্টোরিয়া কলেজে, এবং ইংরাজি ও সংস্কৃতে স্বর্ণ পদক নিয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে পাস করলেন, কুচবিহারে রায়বাহাদুর প্রদান করেছিলেন সেই স্বর্ণ পদক, সঙ্গে প্রস্তাব করে ছিলেন চাকরীর। সুধীন্দ্রনাথের মধ্যে জাতীয়তা বোধ ছিল প্রবল, সর্বজন সমক্ষে তিনি সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বসলেন । কিন্তু ‘নাছোড়বান্দা’ রায়বাহাদুর এই রকম একটি হিরকখণ্ড হাতছাড়া করতে নারাজ। খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারলেন কৌলীন্যে বংশ পরিচয়ে ছেলেটি কম যায় না, বাবা যদুনাথ ছিলেন খুলনার ‘নলদা’ গ্রামের জমিদার, বাবা ছাড়া একমাত্র সহোদর দেশেই থাকে, তাই প্রস্তাবটা দিয়েই বসলেন –সুধীন্দ্রনাথকে জামাই করতে চান তিনি। তিনি এবার তাঁর বাবার অনুমতির কথা বলেন এবং তাঁর বাবার অনুমতি পাওয়ার পর ১৯ বছরের সুধীন্দ্রনাথের পরিণয় ঘটলো ৯ বছরের প্রিতিলতা দেবীর সঙ্গে। 

১৯১৮র মাঝামাঝি শিলিগুড়ি বয়েজ হাইস্কুলে প্রধানশিক্ষক পদে তাঁর কর্মজীবনের সূত্রপাত। শিক্ষকতার পাশাপাশি করেছেন সাহিত্যচর্চা। তিনি ছিলেন একাধারে নাট্যকার, অনুবাদক ও লেখক। বিশ্বসাহিত্যের অসংখ্য ছোটোগল্পের অনুবাদ ও মৌলিক গল্প ছাড়াও লিখেছেন দুশোটির বেশি উপন্যাস, পঞ্চাশটির বেশি নাটক।

মাত্র ২৬ বছর বয়সে প্রথম নাটক রচনা, সময়টা ১৯২২ সাল নাটক তখন বাঙালি জাতীর একটি অঙ্গ, বাংলার রঙ্গমঞ্চে তখন যারা অভিনয় করতেন, এখন তাঁদের নাম শুনলে অভিনয় জগৎ-এর ব্যক্তিত্ব থেকে নাট্যপ্রিয় ব্যক্তি, সকলকেই কপালে হাত ছোঁয়াতে হবে ! নাট্যাচার্য শিশির ভাদুরি, ছবি বিশ্বাস থেকে সয়জুবালা, কাননবালা, কে না অভিনয় করেছেন তাঁর লেখা নাটকে ? তাঁর লেখা অনেক নাটকেই স্বয়ং কাজী নজরুল গান লিখে সুরারোপ করে ছিলেন।

তাঁর লেখা প্রধান নাটক গুলির মধ্যে প্রথম নাটক মোগল মসনদ, রসোনাট্য সর্বহারা চলে ছিল রঙমহলে, পৌরাণিক নাটক শিবার্জ্জুন চলেছিল মিনার্ভা থিয়েটারে, মেয়েদের জন্য লিখে ছিলেন কাল্পনিক নাটক বীর্যশুক্লা অভিনীত হয় মিনার্ভাতে, তা ছাড়া মহিলাদের জন্য মীরাবাঈ ও ভবানী মঠ ছিল বিখ্যাত নাটক, ঐতিহাসিক নাটক মারাঠা মোগল অভিনীত হয় মিনার্ভাতে, রঙ্গনাট্য বিপ্লব চলেছিল মনমোহন থিয়েটারে। আরো দুটি নাটক মনমোহন থিয়েটারে অভিনীত হয় সমুদ্র গুপ্ত ও মহারাষ্ট্র । ছোটদের জন্য তাঁর লেখা নাটক ‘কেদার রাজা ও রানা প্রতাপ’।

ঐ সময়ে ভারতের বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে জাতীয়তা বোধের প্রভাব ছিল, সুধীন্দ্রনাথ তাঁর বাইরে ছিলেন বলে মনে হয় না, শোনা যায় তাঁর লেখা নাটক ‘বাংলার বোমা’ ইংরেজ সরকার নিষিদ্ধ করে ছিল ! অজানা রয়ে গেছে সেই বোমার মসলা কি ছিল। 

প্রথম দিকে যে নাট্যকার রুপে অর্থ উপার্জন করতে পারেন নি তাঁর প্রমান ১৯৩০ সালে তিনি চলে আসেন হুগলীর কোন্নগরে, কাজ নেন একটি ওষুধের দোকানে ! পারিবারিক ভাবে ধনী হলেও কেন কাজ নিলেন ওষুধের দোকানে তা অজানা, যদিও এটিই তাঁর জীবনে প্রথম এবং শেষ চাকরী।

সৃষ্টিশীল মানুষেরা কখনো বসে থাকার লোক হয় না, সুধীন্দ্রনাথ ও ছিলেন না। কোন্নগরে দারহাটায় তৈরি করেন একটি পাঠশালা, যেটিকে পরে তিনি সেকেণ্ডারি ইস্কুলে পরিনত করেন। দারহাটায় গেলে এখনো তার আবক্ষ মূর্তির দেখা মিলবে।

আজ থেকে ৩০-৪০ বছর আগেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে একটা চল ছিল, বন্ধু বান্ধবদের জন্মদিনে সব্যসাচীর কলমে টারজানের বইগুলি ছিল প্রথম পছন্দের তালিকায়। সুধীন্দ্রনাথই সব্যসাচী ছদ্মনামে লিখতেন।

শুকতারায় প্রথম দুটি টারজানের গল্প লিখেছিলেন নৃপেন্দ্র কৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়। তৃতীয় কাহিনী থেকে সুধীন্দ্রনাথ লেখা শুরু করেন। ১৩৭২ বঙ্গাব্দে প্রথম লেখেন “টারজানের এডভেঞ্চার” ১৩৭৩ লেখেন “টারজানের নতুন এডভেঞ্চার”, ১৩৭৪ এ বের হয় “মৃত্যুহীন টারজান”, ১৩৭৫ এ বের হয় “বনের রাজা টারজান”, এর পর একের পর এক গল্প বের হতে থাকে শুকতারায়। ওনার মৃত্যুর পরও ১৩৯৯ সাল অবধি ধারাবাহিক ভাবে টারজান প্রকাশিত হয়। 

পরে দেবসাহিত্য কুটীরের টারজান সিরিজে ইংরাজি নামে গল্পগুলি বের হতে থাকে। যেমন টারজান দি এপম্যান, টারজান অ্যান্ড হিজ সন, টারজান দি ফিয়ারলেস্‌, টারজান দি হিরো, টারজান ফাইট ফর হিজ লাইফ, টারজান অ্যান্ড হিজ ফ্রেন্ড ইত্যাদি বই গুলি এখনো পাওয়া যায়। উনিই আবার শ্রী বেণীমাধব শীলের অক্ষয় লাইব্রেরী থেকে কলেজ স্টুডেন্টদের জন্য ৫ টি টারজান সিরিজের বই লেখেন। এই সিরিজের বই গুলি লুপ্ত হতে বসেছে ।

সুধীন্দ্রনাথের কলম এখানেই থেমে থাকেনি, করেছেন প্রায় ১০০০ উপর বিদেশী গল্পের বঙ্গানুবাদ, দেব সাহিত্য কুটীরের অনুবাদ সিরিজের ‘এ টেল অফ টু সিটি’, লাস্ট ডেজ অফ পম্পেই, ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্ট, ‘ট্রাজিডি অফ সেক্সপিওর’, ‘সেক্সপিওর কমেডি’ বিদেশি গল্প চয়ন, বিশ্বের শ্রেষ্ঠ গল্প, গল্পের বিশ্ব মেলা, ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

১৯৫০ সাল থেকে শুকতারায় প্রত্যেক সংখ্যায় থাকতো তার অনুবাদ একটি ছোট গল্প, কখনো ভুতের গল্প কখনো বা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের গল্প কখনো রুপকথার গল্পের অনুবাদ, অনুবাদ না বলে ভাবানুবাদ বলা যেতে পারে, কারন বড়দের জন্য লেখা বিশ্বের শ্রেষ্ঠ গল্প গুলি সাবলিল ভাবে ছোটদের জন্য উপযোগী করে লেখেন ।

এই সব লেখাগুলি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে হলদে হয়ে যাওয়া শুকতারার পাতায়, এখনো দেখা মেলে মাঝে মাঝে । তাঁর লেখা শেষ ছোট গল্প শুকতারায় বের হয় ‘প্রলয়ের প্রাক্কালে হোমস্‌’ ( শার্লক হোমস-এর একটি গল্প )। 

শ্রী বৈজ্ঞানিক নামে কল্প বিজ্ঞানের অনেক গল্প শুকতারায় অনুদিত হয়। ‘লতার নাম হাউ মাউ খাউ”, “আলফা সেন্টুরির পথে’ উল্লেখযোগ্য।

অনেকে বলেন তিনি মধুসুদন মজুমদার ছদ্মনামে ‘অমর বীর কাহানী’ ধারাবাহিক শুকতারায় লেখেন, আসল মধুসুদন মজুমদার ছিলেন জন্মান্ধ, তিনি দৃষ্টিহীন ছদ্মনামে লিখতেন ।

মৌলিক সাহিত্যে ছিল তাঁর অবাধ বিচরণ, গোয়েন্দা গল্প লিখেছেন অনেক, বই আকারে প্রকাশ পায় গোয়েন্দা গল্প শেষ বলী, নৈশ অভিযান, ইস্কাবনের টেক্কা, লক্ষ টাকার হীরে, মুখোসের অন্তরালে, ব্লাড হাউণ্ড, কালের কবলে ইত্যাদি।

লিখেছেন শুকতারায় ধারাবাহিক ভাবে গল্প সমকালিন কঠিন বাস্তবতা পূর্ব বঙ্গ থেকে উৎখাতিত মানুষের দুঃখ যন্ত্রণার কাহিনী “তাসের প্রাসাদ”, পরে বই আকারে প্রকাশ পায় ‘মা ভাই বোন’ নামে।

বাংলা সাহিত্যে এ রকম অজস্র মনিমুক্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখে গেছেন মানুষটা। ছড়িয়ে ছিটিয়ে এই কারনে বলছি সেই সময় তাঁর অনেক লেখাই প্রকাশ পেয়ে ছিল ছদ্ম নামে । যা কিনা এখন ইতিহাসের অতলে লুকিয়ে আছে , এই বিষয় ও গবেষণা করা যেতে পারে।

শেষ জীবনে তিনি তাঁর একমাত্র ভাই নাট্যকার দেবেন্দ্রনাথ রাহার কাছে কালনায় গিয়ে থাকতেন, ও মৃত্যুর কিছুদিন আগে উল্টোডাঙ্গার বাসভবনে চলে এসে ছিলেন পুত্র ‘অম্বরিশ রাহার’ কাছে, ১৮ ফেব্রুয়ারী ১৯৮৬ সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। 

পরিতাপ ও লজ্জার বিষয়, মৃত্যুর মাত্র ৩ মাস আগে তিনি ‘কালিদাস রায়’ পুরস্কার পান। বেশি মাত্রায় আত্ম-সমালোচক অথচ আত্ম-বিস্মৃত বাঙালীর কাছে এটাই সান্তনা।


কৃতজ্ঞতা - ইন্দ্রনাথ ব্যানার্জী।.

নীচে তার রচনার ওপর ক্লিক করলে নির্দিষ্ট বইটি পেতে পারেন।

অ - ঔ ক - ন প - ম, শ স, ষ, র, ল, য, হ, ক্ষ






































































































একটি আবেদন - 
কেউ যদি কোনো বই/ পত্রিকা স্ক্যান করতে / দিতে চান 
বা সূচীপত্র ও.সি.আর. করতে চান - 
তাহলে নিচের ইমেলে যোগাযোগ করবেন 

babuipakhi819@gmail.com 

2 comments:

  1. ভালো লাগলো।

    ReplyDelete
  2. খুব ভালো কাজ। এর জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
    কিছু কিছু সাইট ব্লক হয়ে যাচ্ছে - মালিসিয়াস সাইট বলে , যেমন সমরেশ বসুর "দেখি নাই ফিরে " ডাউনলোড করার সময়। এটা ঠিক করা যাবে ? আমার নর্টন স্কান্নের এই মেসেজ দিচ্ছে।
    আশা আছে , আমি কিছু বই এই সাইটএ দিতে পারব।

    ReplyDelete