বাংলা ভাষার সমস্ত লেখক - এক জায়গায় ক্রমানুসারে
ধীরেন বল
জন্ম - ২২শে জানুয়ারী, ১৯১২ মৃত্যু - ১৯৯২
বগুরা, বাংলাদেশ কলকাতা
একই সঙ্গে আঁকতে ও লিখতে পারা ‘শিল্পী’র সংখ্যা সারা পৃথিবীতেই হাতে গোনা। আমাদের দেশেও ‘বিরল’ সেই সব শিল্পীদের মধ্যে অন্যতম ব্যক্তিত্ব ধীরেন বল। নন্দলাল ও দক্ষবালা বলের কৃতী সন্তান ধীরেন মূলত ছিলেন অঙ্কন শিল্পী। পাশাপাশি ছোটদের ছড়া, কবিতা ও গল্প লেখাতেও তাঁর হাত ছিল বেশ পটু। আসলে মনে প্রাণে তিনি ছিলেন চিরশিশু। আর কৈশোরের ছায়াও ছিল যেন তার জীবন জুড়ে। তাইতো তিনি সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন অসাধারণ সব ‘চিত্রকথা’।
শতবর্ষের উজ্জ্বল আলোয় দীপ্ত অঙ্কন শিল্পী ও শিশুসাহিত্যিক ধীরেন বল জন্মগ্রহণ করেন বাংলাদেশের বগুড়া জেলার বারইল গ্রামে। ১৯১২ সালের ২২ জানুয়ারি।
ছোটবেলা থেকেই ছবি দেখতে ও আঁকতে খুব ভালবাসতেন। বগুড়ার গ্রামীণ বাড়িতে প্রকৃতির মধ্যেই তাঁর তুলি ও কলম যেন পাখা মেলে উড়ে বেড়াত! কখনও ঠাকুর গড়ার কাজ চলছে গ্রামে, আট-দশ বছরের ধীরেনের চোখ অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকত প্রতিমার চোখ আঁকার দৃশ্যে। অঙ্কনে মূর্তি ‘নির্মাণ’-এর এই পর্ব তাঁকে মুগ্ধ করত।
শিক্ষা জীবনের শুরু বগুড়ার করোনেশন স্কুলে। ১৯৩১ সালে রংপুরের কারমাইকেল কলেজ থেকে বিএ পাশ। পরে কলকাতার গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজ থেকে তিন বছরের কমার্শিয়াল আর্ট-এ শিক্ষালাভ। ১৯৩৮ সাল থেকে দু’বছর তিনি ভারত সরকারের প্রচার বিভাগের শিল্পী হিসেবে সিমলায় ছিলেন। সেখানে থাকাকালীন মাটির দুর্গা ও সরস্বতী প্রতিমা গড়েছিলেন। সিমলায় সেই প্রথম মৃন্ময়ী মূর্তির পুজো হয়।
পরে ওই চাকরি ছেড়ে তিনি কলকাতায় এসে বিভিন্ন সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপন বিভাগে চিত্রশিল্পী হিসেবে কাজ শুরু করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কোকোলা, হিমানী, হিমকলন্যাস, ভিভিগ্যান, নিম সাবান ও আমলা-র বিজ্ঞাপন। এই সময় আনন্দবাজার সংস্থার বিমল ঘোষ (মৌমাছি) তাঁকে ‘আনন্দমেলা’য় নিয়ে আসেন। ১৯৪০ নাগাদ সংস্থার বর্মণ স্ট্রিটের কার্যালয়ে তাঁর প্রথম কর্মজীবন শুরু হয়। এই পত্রিকার সব বিভাগের গল্প-উপন্যাসে ছবি আঁকতেন তিনি। প্রতি সপ্তাহের আনন্দমেলাতে গল্প প্রকাশিত হত তাঁর আঁকা ছবিতে।
লেখাতেও যথেষ্ট দক্ষ ছিলেন ধীরেন বল। তাঁর সৃষ্টি ‘তুতুভূতু’ বইটি শিশু সাহিত্যে ‘অমর’ হয়ে রয়েছে। দশ বছর বয়স থেকেই তিনি ‘সন্দেশ’, ’খোকাখুকু’, ‘শিশুসাথী’র গ্রাহক ছিলেন। কলকাতা থেকে সেই সব পত্রিকা গ্রামের বাড়িতে পৌঁছাত। ওই বয়স থেকেই ‘শিশুসাথী’তে লেখা পাঠাতেন বালক ধীরেন। তবে শুধু ছবি আঁকা নয়, দশ বছর বয়সে স্কুলের খাতাকে তৈরি করেছিলেন পত্রিকা। এ রকম একটি খাতার নাম দিয়েছিলেন ‘গাঁথা’। তবে জীবনে এক বারই তিনি ‘বার্মা শেল’ কর্তৃক আয়োজিত ‘আর্ট ইন ইন্ডাস্ট্রি’তে প্রদর্শনীর জন্য মাত্র তিনটি ছবি পাঠিয়েছিলেন। সব ক’টি ছবিই পুরস্কৃত হয়। সুকুমার রায়ের কবিতা ও ছবি তাঁকে প্রেরণা জুগিয়েছিল।
তাঁর সৃষ্টির মধ্যে আছে ছড়া-ছবিতে গল্প, ছড়া ও ছবি আঁকার বই, ‘চেঙাবেঙা’, ‘তুতুভূতু’, ‘ঠেকে হাবুল শেখে’, ‘দেখে হাবুল শেখে’, ‘মজার দেশে মানু’, ‘দেখে এলাম ভারত’, ‘দেখে এলাম কলকাতা’, ‘এই বাংলার মেয়ে’, ‘ছড়ায় ভরা গ্রাম’, অঙ্কন শিক্ষার বই-সহ প্রায় ৫০টি বই।
‘চেঙাবেঙা’ বইটির ছবির জন্য তিনি রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পেয়েছেন। এ ছাড়া আছে ভুবনেশ্বরী পদক, মৌমাছি পুরস্কার, শিশু সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার, রঞ্জিত স্মৃতি পদক। তাঁর প্রথম প্রকাশিত বই ‘তোলপাড়’ (১৯৪৭)। ‘টইটুম্বুর’-এর জন্য শিশুসাহিত্য সংসদ পুরস্কার পান।
শিল্পীর স্ত্রীর নাম প্রতিমা বল। ছয় পুত্র-কন্যা। কলকাতায় বসবাস বেলগাছিয়া অঞ্চলে। বাড়ির নাম নন্দম।
তাঁর লেখা "ঠেকে হাবুল শেখে" এক সময় বেশ বিখ্যাত হয়েছিল। কিশোর জ্ঞান বিজ্ঞান পত্রিকায় চিত্র কাহিনী হিসেবে প্রকাশ হয়েছে।
শিশুসাহিত্যে অনেক ভালো ভালো বই লেখা হয়েছে, কিন্তু তুতু-ভূতুর মতো এমন সৃষ্টি, এমন ছবি দ্বিতীয় আর একটিও নেই বাংলা সাহিত্যে।
১৯৯২ সালে শিল্পী ধীরেন বল সবকিছু ফেলে চিরতরে চলে যান আমাদের ছেড়ে। তবুও তিনি চিরকাল বেঁচে থাকবেন তুতু-ভূতুর স্রষ্টা হয়ে।
নীচে তার রচনার ওপর ক্লিক করলে নির্দিষ্ট বইটি পেতে পারেন।
একটি আবেদন -
কেউ যদি কোনো বই/ পত্রিকা স্ক্যান করতে / দিতে চান
বা সূচীপত্র ও.সি.আর. করতে চান -
তাহলে নিচের ইমেলে যোগাযোগ করবেন
কেউ যদি কোনো বই/ পত্রিকা স্ক্যান করতে / দিতে চান
বা সূচীপত্র ও.সি.আর. করতে চান -
তাহলে নিচের ইমেলে যোগাযোগ করবেন
babuipakhi819@gmail.com
No comments:
Post a Comment